সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিয়েছিল নরওয়েতে

তারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিয়েছিল নরওয়েতে

তারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিয়েছিল নরওয়েতে

কয়েক বছর আগে রোয়ালএলসেবেথ নামে এক দম্পতি, যাদের বয়স ৪০-এর কোঠার শেষের দিকে, তারা নরওয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেরগেনে আরামদায়ক জীবনযাপন করত। তাদের মেয়ে ইসেবেল ও ছেলে ফেবিয়ান-সহ তারা মণ্ডলীর বিভিন্ন কার্যক্রমে বিশ্বস্তভাবে অংশগ্রহণ করত। রোয়াল একজন প্রাচীন এবং এলসেবেথ একজন অগ্রগামী হিসেবে আর ইসেবেল ও ফেবিয়ান প্রকাশক হিসেবে সেবা করত।

কিন্তু, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেই পরিবার ভিন্ন কিছু করার—একটা বিচ্ছিন্ন এলাকায় এক সপ্তাহ প্রচার করার—সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই রোয়াল ও এলসেবেথ সেই সময়ে ১৮ বছর বয়সি ফেবিয়ানকে নিয়ে সুমেরুবৃত্তের ওপরে অবস্থিত ফিনমার্ক প্রদেশের একটা উপদ্বীপ নর্ডকিনে গিয়েছিল। সেখানে খালেফিউর নামক গ্রামে তারা এমন ভাইবোনের সঙ্গে প্রচার করেছিল, যারা নিজেরাও সেই বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার জন্য এসেছিল। রোয়াল স্মরণ করে বলেন, “সেই সপ্তাহের শুরুতে আমি অনেক আনন্দিত ছিলাম কারণ আমি আমার কাজগুলো গুছিয়ে নিয়ে পুরো একটা সপ্তাহজুড়ে বিশেষ কাজে অংশ নিতে পেরেছি।” কিন্তু পরে, সেই একই সপ্তাহে রোয়াল অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেন। এমন কী ঘটেছিল?

এক অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন

“ফিনমার্কে সেবারত মারিও নামে একজন অগ্রগামী অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আমরা লাকসেল্ভ নামে একটা শহরে সেখানকার মণ্ডলীর ২৩ জন প্রকাশককে সাহায্য করার জন্য যেতে ইচ্ছুক কি না,” রোয়াল বলেন। এই অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে রোয়াল একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন: “এলসেবেথ ও আমি যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার সম্ভাবনা সম্বন্ধে চিন্তা করেছি—কিন্তু সেটা আরও পরে, যখন সন্তানরা আমাদের সঙ্গে থাকবে না।” তা সত্ত্বেও, এই বিচ্ছিন্ন এলাকায় এমনকী অল্প কয়েক দিন প্রচার করার সময় রোয়াল বুঝতে পেরেছিলেন যে, লোকেরা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছুক। তাদের সাহায্য দরকার এখনই—পরে নয়। “ওই প্রশ্ন আমার বিবেককে দংশন করে আর এমনকী আমার কয়েক রাতের ঘুম কেড়ে নেয়,” তিনি স্মরণ করে বলেন। এরপর মারিও, রোয়াল ও তার পরিবারকে গাড়িতে করে খালেফিউরের প্রায় ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মাইল) দূরে অবস্থিত লাকসেল্ভে নিয়ে গিয়েছিলেন। মারিও চেয়েছিলেন যেন দর্শনার্থীরা নিজেরা সেখানকার ছোটো মণ্ডলীটা দেখে।

লাকসেল্ভের দুজন স্থানীয় প্রাচীনের মধ্যে আন্দ্রেয়াস নামে একজন প্রাচীন দর্শনার্থীদের সেই এলাকা ও কিংডম হল ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। সেই মণ্ডলী তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল এবং রোয়াল ও এলসেবেথকে বলেছিল যে, তাদের পরিবার যদি রাজ্যের কাজে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সেখানে চলে আসে, তাহলে তারা অনেক খুশি হবে। আন্দ্রেয়াস হেসে বলেছিলেন, তিনি ইতিমধ্যেই রোয়াল ও ফেবিয়ানের চাকরির ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন! তারা কী করবে?

কোনটা বাছাই করবে?

ফেবিয়ানের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল এইরকম: “আমার সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।” তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, যাদের সঙ্গে সে তার নিজের মণ্ডলীতে বড়ো হয়েছে, তাদেরকে ছেড়ে একটা ছোটো শহরে জীবনযাপন করার চিন্তা তার কাছে তেমন আগ্রহজনক বলে মনে হয়নি। তা ছাড়া, একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে তখনও তার প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। কিন্তু, ইসেবেলকে (তখন ২১ বছর বয়স) যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার ব্যাপারে সে কী মনে করে, তখন সে বলেছিল: “আমি সবসময় ঠিক এটাই করতে চেয়েছি!” কিন্তু তার পর ইসেবেল বলে: “আমি যখন বিষয়টা নিয়ে আরও চিন্তা করি, তখন আমি ভাবি, ‘এটা কি আসলেই কোনো ভালো প্রস্তাব? আমি কি আমার বন্ধুবান্ধবের অভাব বোধ করব? আমার কি নিজের মণ্ডলীতেই থাকা উচিত, যেখানে বিভিন্ন বিষয় সুবিধাজনক ও আগে থেকে বোঝা যায়?’” সেই আমন্ত্রণের প্রতি এলসেবেথ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেন, “আমার মনে হয়েছিল যিহোবা আমাদের পরিবারকে একটা কার্যভার দিয়েছেন, কিন্তু একইসময়ে আমি আমাদের নতুন করে মেরামত করা বাড়ি আর সেইসঙ্গে এই বাড়িতে গত ২৫ বছর ধরে আমরা যে-সমস্ত জিনিসপত্র কিনেছি, সেগুলোর বিষয়েও চিন্তা করেছি।”

সেই বিশেষ সপ্তাহ শেষ হওয়ার পর যদিও রোয়াল ও তার পরিবার বেরগেনে ফিরে গিয়েছিল, কিন্তু তারা প্রায় ২,১০০ কিলোমিটার (১,৩০০ মাইল) দূরের লাকসেল্ভে তাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের কথা ভুলে যেতে পারেনি। এলসেবেথ বলেন, “আমি যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা করেছিলাম আর সেইসঙ্গে সেখানে যাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম, আমরা একে অন্যের কাছে ছবি ও অভিজ্ঞতা পাঠাতাম।” রোয়াল বলেন: “আমার সেই বিষয়টা পুরোপুরি উপলব্ধি করার জন্য সময় দরকার ছিল। তা ছাড়া, আমাকে এটাও বিবেচনা করতে হয়েছিল যে, আমাদের পক্ষে নিজেদের ভরণপোষণ করা সম্ভব হবে কি না। কীভাবে আমরা নিজেদের ভরণপোষণ করব? আমি যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা করেছিলাম আর আমার পরিবার ও সেইসঙ্গে অভিজ্ঞ ভাইদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।” ফেবিয়ান স্মরণ করে বলে: “বিষয়টা নিয়ে আমি যত বেশি চিন্তা করেছি, ততই এটা উপলব্ধি করেছি, না বলার জন্য আমার কাছে সত্যিই কোনো অকাট্য যুক্তি নেই। আমি বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছি আর এর ফলে সেখানে যাওয়ার বিষয়ে আমার আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়েছে।” আর ইসেবেল সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেখানে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য তার নিজের শহরেই অগ্রগামীর কাজ করা শুরু করেছিল। ছয় মাস ধরে অগ্রগামীর কাজ আর একইসময়ে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নে যথেষ্ট সময় ব্যয় করার পর, সে নিজেকে সেই বড়ো পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তুত বলে মনে করেছিল।

তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া

যেখানে প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই পরিবার তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। রোয়াল ভালো বেতনের একটা চাকরি করতেন আর তার সেই কাজ অনেক পছন্দ ছিল, কিন্তু তার পরও তিনি সেখানে এক বছরের ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, তার কর্মকর্তা তাকে খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে থাকতে বলেছিলেন—দুই সপ্তাহ কাজ করবেন, আবার ছয় সপ্তাহ ছুটিতে থাকবেন। “যদিও আমার আয় অনেক কমে গিয়েছিল কিন্তু সবকিছু ভালোমতোই হয়েছিল,” রোয়াল বলেন।

এলসেবেথ বলেন: “আমার স্বামী আমাকে লাকসেল্ভে একটা বাড়ি খুঁজতে আর সেইসঙ্গে বেরগেনে আমাদের নিজেদের বাড়িটা ভাড়া দিতে বলেছিল। এর জন্য অনেক সময় ও প্রচেষ্টা দরকার ছিল, তবে আমরা সফল হয়েছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “অল্পসময় পরে ছেলে-মেয়েরা খণ্ডকালীন চাকরি পেয়েছিল আর তারাও খাবার ও পরিবহন খরচ মেটাতে আমাদের সাহায্য করেছিল।”

ইসেবেল বলে: “আমরা যে-শহরে গিয়েছিলাম সেই শহরটা যেহেতু ছোটো ছিল, তাই আমার জন্য সবচেয়ে বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল একজন অগ্রগামী হিসেবে নিজের ভরণপোষণের জন্য একটা কাজ খুঁজে পাওয়া। কখনো কখনো মনে হতো, কোনো আশাই নেই।” তা সত্ত্বেও, যেকোনো খণ্ডকালীন চাকরি—এক বছরে নয়টা চাকরি—গ্রহণ করার মাধ্যমে ইসেবেল নিজের খরচ মেটাতে সক্ষম হয়েছিল। ফেবিয়ানের কী হয়েছিল? “একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আমার পড়াশোনা শেষ করার জন্য, আমার তখনও পর্যন্ত একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা বাকি ছিল। আমি লাকসেল্ভে তা করেছিলাম। পরে, পরীক্ষায় পাশ করে আমি ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে একটা খণ্ডকালীন চাকরি পেয়েছিলাম।”

অন্যেরা যেভাবে তাদের সেবাকে বৃদ্ধি করেছে

এ ছাড়া, মারেলিউস ও তার স্ত্রী কেসিয়া যেখানে প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে সেবা করতে চেয়েছিল। মারেলিউস, যার বয়স এখন ২৯ বছর, তিনি বলেন: “অগ্রগামীর কাজ সম্বন্ধে সম্মেলনের বক্তৃতা ও সাক্ষাৎকারগুলো আমাকে আমার সেবা বৃদ্ধি করার বিষয়ে চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত করেছে।” কিন্তু কেসিয়া, যার বয়স এখন ২৬ বছর, তার জন্য পরিবারের কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তা একটা প্রতিবন্ধকতা ছিল। “আমার প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার চিন্তা করলে আমি ভয় পেতাম,” তিনি বলেন। তা ছাড়া, মারেলিউস তাদের বাড়ির ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য একটা পূর্ণসময়ের চাকরি করতেন। তিনি বলেন: “যিহোবার সাহায্যে এবং পরিবর্তন করার জন্য প্রার্থনায় তাঁর কাছে অনেক সাহায্য চেয়ে আমরা অন্য জায়গায় যেতে সক্ষম হয়েছিলাম।” প্রথমত, তারা বাইবেল অধ্যয়নের জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করেছিল। তার পর, সেই দম্পতি তাদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিল, তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল এবং ২০১১ সালের আগস্ট মাসে নরওয়ের উত্তরাঞ্চলে আল্টা শহরে চলে গিয়েছিল। সেখানে অগ্রগামী হিসেবে নিজেদের ভরণপোষণ চালানোর জন্য মারেলিউস অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে এবং কেসিয়া একটা দোকানে কাজ করে।

নুটলিসবেত দম্পতি, যাদের বয়স এখন ৩০-এর কোঠার মাঝামাঝি, তারা বর্ষপুস্তক (ইংরেজি) থেকে যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করছে এমন ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। লিসবেত বলেন, “যদিও এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের বিদেশে সেবা করার বিষয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল, তবে আমি দ্বিধা বোধ করেছিলাম কারণ আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ তা করতে পারবে কি না, সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ ছিল।” তার পরও, তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। নুট বলেন: “আমরা আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দিয়েছিলাম এবং টাকাপয়সা জমানোর জন্য আমার মায়ের সঙ্গে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিলাম। পরে, বিদেশি ক্ষেত্রে সেবা করার অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য আমরা এক বছরের জন্য বেরগেনের ইংরেজিভাষী মণ্ডলীতে চলে গিয়েছিলাম আর সেখানে আমরা লিসবেতের মায়ের সঙ্গে থাকতাম।” অল্পসময়ের মধ্যেই নুট ও লিসবেত নিজেদের অন্য জায়গায় যাওয়ার মতো প্রস্তুত বলে মনে করেছিল এবং উগান্ডায় চলে যাওয়ার মতো বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা বছরে দুই মাসের জন্য নরওয়েতে ফিরে এসে কাজ করে। এভাবে তারা বছরের বাকি সময় উগান্ডায় থাকার ও পূর্ণসময়ের প্রচার কাজ করার জন্য যথেষ্ট টাকাপয়সা অর্জন করতে পারে।

“আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়”

এইরকম ইচ্ছুক কর্মীরা কেমন ফলাফল লাভ করেছিল? রোয়াল বলেন: “আমরা বেরগেনের চেয়ে এই বিচ্ছিন্ন এলাকায় পরিবারগতভাবে আরও বেশি সময় কাটাই। আমাদের পারিবারিক বন্ধন আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আমাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে দেখা হল এক আশীর্বাদ।” তিনি আরও বলেন: “তা ছাড়া, বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধে আমরা এখন আগের চেয়ে কম চিন্তা করি। আমরা যতটা মনে করেছিলাম, সেগুলো আসলে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।”

এলসেবেথ আরেকটা ভাষা শেখার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। কেন? লাকসেল্ভ মণ্ডলীর এলাকার মধ্যে কারাসিয়োক গ্রাম রয়েছে, যেটা সামি জাতির—উত্তর নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও রাশিয়ার আদিবাসীদের—কেন্দ্রস্থল। তাই, আদিবাসীদের কাছে সহজে পৌঁছানোর জন্য এলসেবেথ সামি ভাষার কোর্স করেছিলেন। এখন তিনি ওই ভাষায় সাধারণ কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারেন। তিনি কি তার নতুন এলাকা উপভোগ করছেন? তিনি হেসে বলেন: “আমি ছয়টা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করি। আমি এই জায়গা ছেড়ে অন্য কোথায়ই-বা থাকতে চাইব!”

ফেবিয়ান, যে এখন একজন অগ্রগামী ও পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছে, সে বলে যে, সে এবং ইসেবেল মিলে তাদের নতুন মণ্ডলীর এমন তিন জন কিশোর-কিশোরীকে সাহায্য করেছে, যাদের মণ্ডলীর কাজে আরও বেশি জড়িত হওয়ার জন্য উৎসাহের প্রয়োজন ছিল। তাদের তিন জনই এখন সক্রিয়ভাবে পরিচর্যা করছে। আসলে, তাদের মধ্যে দুজন বাপ্তিস্ম নিয়েছে এবং ২০১২ সালের মার্চ মাসে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেছে। সেই কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একজন, যে সত্য থেকে সরে যাচ্ছিল, সে ফেবিয়ান ও ইসেবেলকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল কারণ তারা তাকে “আবারও ফিরে আসতে” সাহায্য করেছিল। ফেবিয়ান বলে: “তার কথায় আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। কাউকে সাহায্য করতে পারলে কী যে আনন্দ লাগে!” ইসেবেল বলে, “এই কার্যভারে আমি সত্যি সত্যিই ‘আস্বাদন করে দেখেছি, সদাপ্রভু মঙ্গলময়।’” (গীত. ৩৪:৮) সে আরও বলে: “সবচেয়ে বড়ো কথা হল, এখানে সেবা করা সত্যিই মজার!”

মারেলিউস এবং কেসিয়া যদিও এখন জীবনযাপনের মানকে আরও সাদাসিধে করেছে কিন্তু তারা এক সমৃদ্ধ জীবন উপভোগ করছে। আল্টার যে-মণ্ডলীতে তারা গিয়েছে, সেখানে এখন ৪১ জন প্রকাশক রয়েছে। মারেলিউস বলেন: “পিছনে ফিরে তাকালে, আমরা আমাদের জীবনে কতটা পরিবর্তন করেছি তা দেখে আমরা অনেক উৎসাহিত হই। এখানে আমরা অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে পারছি বলে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক আর কিছুই নেই।” সেইসঙ্গে কেসিয়া বলেন: “আমি যিহোবার ওপর আরও পূর্ণরূপে নির্ভর করতে শিখেছি আর তিনি আমাদের উত্তম যত্ন নিচ্ছেন। আমি এটাও লক্ষ করেছি, আমার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দূরে থাকায় আমি তাদের সঙ্গে একত্রে যে-সময় কাটিয়েছিলাম, সেই সময়কে আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারছি। আমাদের সিদ্ধান্তের জন্য আমি কখনো আপশোস করিনি।”

নুট এবং লিসবেত উগান্ডায় কেমন করছে? নুট বলেন: “নতুন পরিবেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় লেগেছিল। সময়ে সময়ে জল, বিদ্যুৎ এবং পেটের সমস্যা হয় ঠিকই, কিন্তু আমরা যত বেশি সম্ভব বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারছি!” লিসবেত বলেন: “আমরা যেখানে থাকি, সেখান থেকে মাত্র আধঘন্টার দূরত্বে এমন এলাকা রয়েছে, যেখানে কখনো সুসমাচার নিয়ে যাওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও, সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, লোকেরা বাইবেল পড়ছে, আমাদেরকে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। এমন নম্র ব্যক্তিদের বাইবেলের বার্তা শেখানোর আনন্দের কোনো তুলনাই হয় না!”

আমাদের নেতা যিশু খ্রিস্ট সেই সময়ে কতই না খুশি হন, যখন তিনি স্বর্গ থেকে লক্ষ করেন, যে-কাজ তিনি আরম্ভ করেছিলেন, তা এখন পৃথিবীর আরও বেশি স্থানে সম্পন্ন করা হচ্ছে! হ্যাঁ, ঈশ্বরের সমস্ত লোকের জন্য “সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর” যিশুর এই আদেশ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া এক গভীর আনন্দের বিষয়।—মথি ২৮:১৯, ২০.

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]

বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানো আপনাকে যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে:

• অনুপ্রেরণা এবং “সূক্ষ্ম বুদ্ধি” বা ব্যবহারিক প্রজ্ঞার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন।—হিতো. ৩:২১; ফিলি. ২:১৩; যাকোব ১:৫.

• বিজ্ঞ সহবিশ্বাসীদের কাছে পরামর্শ চান। ‘জ্ঞানীদের সহচর হউন, জ্ঞানী হইবেন।’—হিতো. ১২:১৫; ১৩:২০.

• নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন। “পরিশ্রমীর চিন্তা হইতে [“পরিকল্পনার ফলে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] কেবল ধনলাভ হয়।”—হিতো. ২১:৫.

• এগিয়ে চলুন এবং আপনার পরিকল্পনাগুলো কাজে প্রয়োগ করুন। ‘সদাচরণ করুন।’—গীত. ৩৭:৩.

আপনি যখন এই পদক্ষেপগুলো নেন, তখন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন!—হিতো. ১৬:৩.

[৩ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

খালেফিউর

লাকসেল্ভ

আল্টা

কারাসিয়োক

সুমেরুবৃত্ত

অসলো

বেরগেন

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

রোয়াল এবং ফেবিয়ান

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

এলসেবেথ এবং ইসেবেল

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

নুট এবং লিসবেত উগান্ডায় একটা পরিবারের সঙ্গে অধ্যয়ন করছে

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মারেলিউস এবং কেসিয়া নরওয়েতে এক সামি মহিলার কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছে

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

“আমাদের পারিবারিক বন্ধন আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।”—রোয়াল