সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন​—মাদাগাস্কারে

তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন​—মাদাগাস্কারে

সিলভিয়ানা নামে একজন অগ্রগামী বোন, যার বয়স ২০-র কোঠার মাঝামাঝি, বলেন: “আমি যখন আমার বন্ধুদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনতাম, যারা এমন এলাকাগুলোতে সেবা করত, যেখানে অগ্রগামীদের অনেক প্রয়োজন, তখন আমারও সেই আনন্দ উপভোগ করার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠত।” তিনি আরও বলেন: ‘কিন্তু, আমি এই ভেবে ভয় পেতাম যে, যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করা আমার ক্ষমতার বাইরে।’

আপনি কি সিলভিয়ানার অনুভূতি বুঝতে পারছেন? আপনিও কি আরও বেশি রাজ্যের প্রচারকের প্রয়োজন এমন এলাকায় সেবা করতে চান কিন্তু একইসঙ্গে এই ভেবে দুশ্চিন্তা করেন যে, আপনি কখনো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন কি না? যদি করেন, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না! যিহোবার সাহায্যে হাজার হাজার ভাই-বোন এমন বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে, যেগুলো তাদের পরিচর্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কীভাবে যিহোবা তাদের কয়েক জনের জন্য পথ প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে জানার জন্য আসুন আমরা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ মাদাগাস্কারে ভ্রমণ করি।

বিগত দশ বছর ধরে ১১টা দেশ * থেকে ৭০ জনেরও বেশি উদ্যোগী প্রকাশক ও অগ্রগামী আফ্রিকার এই ফলপ্রসূ এলাকায় সেবা করার জন্য এসেছে, যেখানে অনেকে বাইবেলের প্রতি সম্মান দেখায়। এর পাশাপাশি, অনেক স্থানীয় প্রকাশক দ্বীপের অন্যান্য জায়গায় গিয়ে সেবা করতে ইচ্ছুক হয়েছে, যাতে তারা এই দ্বীপের বিশাল এলাকার সমস্ত জায়গায় রাজ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে সাহায্য করতে পারে। আসুন, আমরা তাদের মধ্যে কয়েক জনের সঙ্গে পরিচিত হই।

ভয় ও নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে ওঠা

বোন পারিন ও ভাই লুই

লুই পারিন নামে এক দম্পতি, যাদের বয়স ৩০-এর কোঠায়, ফ্রান্স থেকে মাদাগাস্কারে চলে আসেন। বহু বছর ধরে তারা বিদেশে চলে গিয়ে তাদের পরিচর্যা বাড়ানোর কথা চিন্তা করছিলেন কিন্তু বোন পারিন অন্য কোথাও গিয়ে বাস করার বিষয়ে ইতস্তত বোধ করতেন। তিনি বলেন: “আমি অজানা জায়গায় গিয়ে বাস করতে ভয় পেতাম। আমি আমাদের পরিবার, মণ্ডলী, আ্যপার্টমেন্ট, পরিচিত জায়গা ও দৈনন্দিন তালিকা ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন ছিলাম। সত্যি বলতে কী, আমার নিজের দুশ্চিন্তাগুলোই সবচেয়ে বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেগুলো আমাকে কাটিয়ে উঠতে হয়েছিল।” ২০১২ সালে, বোন পারিন যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করেন এবং তিনি ও ভাই লুই নিজেদের দেশ ছেড়ে মাদাগাস্কারে চলে আসেন। তিনি তাদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেমন অনুভব করেন? “পিছনের দিকে তাকিয়ে আমি এই বিষয়টা বলতে পারি যে, যিহোবাকে আমাদের জীবনে কাজ করতে দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে।” তার কথার সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করে তার স্বামী বলেন, “আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন, মাদাগাস্কারে আমাদের প্রথম স্মরণার্থ সভায় আমাদের বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত হয়েছিল!”

যখন সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তখন কী এই দম্পতিকে তাদের কার্যভার চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি জুগিয়েছিল? তারা প্রার্থনায় যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন, যাতে যিহোবা তাদের ধৈর্য ধরার জন্য শক্তি প্রদান করেন। (ফিলি. ৪:১৩) ভাই লুই বলেন: “আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং আমাদের ‘ঈশ্বরের শান্তি’ প্রদান করেছিলেন। আমরা আমাদের সেবার আনন্দগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পেরেছিলাম। এ ছাড়া, আমাদের বাড়ির এলাকার বন্ধুরা আমাদের ই-মেল ও চিঠি পাঠিয়ে উৎসাহিত করেছিল, যাতে আমরা হাল ছেড়ে না দিই।”—ফিলি. ৪:৬, ৭; ২ করি. ৪:৭.

ভাই লুই ও বোন পারিন ধৈর্য ধরেছেন বলে যিহোবা তাদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেছেন। ভাই লুই বলেন: ‘২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে আমরা ফ্রান্সে খ্রিস্টান দম্পতিদের জন্য বাইবেল স্কুল-এ * যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। এটা ছিল যিহোবার কাছ থেকে এমন এক উপহার, যেটা আমরা কোনো দিনও ভুলব না।’ গ্র্যাজুয়েশনের পর, সেই দম্পতিকে যখন পুনরায় মাদাগাস্কারে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়, তখন তারা খুবই আনন্দিত হন।

“আমরা তোমাদের নিয়ে খুবই গর্বিত হব!”

বোন নাডিনা ও ভাই ডিড্‌ইয়ে

ডিড্‌ইয়ে নাডিনা নামে ফ্রান্সের এক দম্পতি ২০১০ সালে মাদাগাস্কারে চলে আসেন। সেইসময় তাদের বয়স ছিল ৫০-এর কোঠায়। ভাই ডিড্‌ইয়ে বলেন: “আমরা যুবক বয়সে অগ্রগামীর কাজ করতাম এবং তারপর আমরা তিন সন্তানকে মানুষ করে তুলি। আমাদের সন্তানরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়, তখন আমরা বিদেশে গিয়ে সেবা করার সম্ভাবনা সম্বন্ধে বিবেচনা করি।” বোন নাডিনা স্বীকার করেন: “আমি আমার সন্তানদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার বিষয়টা চিন্তা করে ইতস্তত করছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের বলেছিল: ‘তোমরা যদি যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য বিদেশে চলে যাও, তা হলে আমরা তোমাদের নিয়ে খুবই গর্বিত হব!’ তাদের এই কথাগুলো আমাদের বিদেশে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। যদিও এখন আমরা আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে অনেক দূরে বাস করি কিন্তু আমরা এই বিষয়ে আনন্দিত যে, আমরা তাদের সঙ্গে প্রায়ই কথা বলতে পারি।”

ভাই ডিড্‌ইয়ে ও বোন নাডিনার পক্ষে মালাগাসি ভাষা শেখা সত্যিই এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। বোন নাডিনা হেসে বলেন, “আমাদের বয়স এখন আর ২০ নয়।” কীভাবে তারা এই বিষয়ে সফল হয়েছেন? প্রথমে তারা একটা ফ্রেঞ্চভাষী মণ্ডলীতে যোগ দেন। কিছুসময় পর, তারা যখন মনে করেন, তারা স্থানীয় ভাষা শেখার জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারবেন, তখন তারা একটা মালাগাসিভাষী মণ্ডলীতে যোগ দেন। বোন নাডিনা বলেন: “প্রচারে আমাদের যে-লোকেদের সঙ্গে দেখা হয়, তাদের মধ্যে অনেকেই বাইবেল অধ্যয়ন করতে ভালোবাসে। আমরা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর, প্রায়ই তারা আমাদের ধন্যবাদ জানায়। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল যেন আমি স্বপ্ন দেখছি! আমার এই এলাকায় অগ্রগামীর কাজ করতে খুব ভালো লাগে। আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি, তখন আমি আনন্দের সঙ্গে নিজেকে বলি, ‘আমি আজ প্রচারে যাচ্ছি! দিনটা দারুণ কাটবে!’”

ভাই ডিড্‌ইয়ে হেসে সেই সময়ের কথা স্মরণ করেন, যখন তিনি মালাগাসি ভাষা শিখতে শুরু করেছিলেন। “আমি মণ্ডলীর একটা সভা পরিচালনা করছিলাম কিন্তু আমি ভাই-বোনদের একটা উত্তরও বুঝতে পারছিলাম না। প্রতিটা উত্তরের পর আমি শুধু বলছিলাম, ‘ধন্যবাদ।’ একসময়, আমি যখন একজন বোনকে তার উত্তরের জন্য ধন্যবাদ জানাই, তখন তার পিছনে বসে থাকা কয়েক জন ভাই-বোন আমাকে ইশারা করে বলতে থাকে যে, বোন আসলে ভুল উত্তর দিয়েছেন। আমি সঙ্গেসঙ্গে অন্য একজন ভাইকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিই, যিনি সঠিক উত্তরটা দেন। অবশ্য আমি জানি না যে, সেই ভাই সত্যিই সঠিক উত্তরটা দিয়েছিলেন কি না।”

তিনি আনন্দের সঙ্গে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন

টিয়েরি ও তার স্ত্রী নাডিয়া, ২০০৫ সালের একটা সম্মেলনে “ঈশ্বরকে সম্মানিত করে এমন লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করুন” শিরোনামের নাটকটা দেখেন। তীমথিয়ের বিষয়ে বাইবেলের সেই নাটকটা তাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে এবং যেখানে বেশি রাজ্যের প্রচারকদের প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধি করে। ভাই টিয়েরি বলেন: “নাটকের শেষে আমরা যখন হাততালি দিচ্ছিলাম, তখন আমি আমার স্ত্রীর দিকে হেলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তাহলে? আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ আমার স্ত্রী উত্তরে বলেছিল, সেও একই বিষয়ে ভাবছিল।” অল্পসময়ের মধ্যেই তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। বোন নাডিয়া বলেন, “আমরা আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করেছিলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের কাছে থাকা সমস্ত কিছু চারটে সুটকেসের মধ্যে ভরা সম্ভব হয়েছিল!”

একেবারে বামে: বোন নাডিয়া ও বোন মারি-মাডালেন; একেবারে ডানে: ভাই টিয়েরি

তারা ২০০৬ সালে মাদাগাস্কারে এসে পৌঁছান এবং শুরু থেকেই তাদের পরিচর্যাকে উপভোগ করেন। বোন নাডিয়া বলেন, “লোকেরা রাজ্যের বার্তার প্রতি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটা আমাদের অনেক আনন্দিত করে!”

তবে ছ’বছর পর, এই দম্পতি একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন। বোন নাডিয়ার মা মারি-মাডালেন, যিনি ফ্রান্সে থাকতেন, তিনি পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেন ও তার মাথায় চোট লাগে। এই দম্পতি বোন মারি-মাডালেনের ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নেন ও এরপর, বোনকে মাদাগাস্কারে এসে তাদের সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দেন। যদিও বোন মারি-মাডালেনের বয়স সেইসময় ৮০ বছর ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি আনন্দের সঙ্গে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। বিদেশে থাকার বিষয়ে তিনি কেমন অনুভব করেন? তিনি বলেন: “কখনো কখনো আমার পক্ষে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন হয় কিন্তু আমার সীমিত ক্ষমতা সত্ত্বেও, আমি অনুভব করি যে, মণ্ডলীতে আমি সাহায্য করতে সক্ষম হই। আর যে-বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত করে, সেটা হল এখানে থাকার ফলে আমার মেয়ে-জামাই এই এলাকায় তাদের ফলপ্রসূ পরিচর্যা চালিয়ে যেতে পারছে।”

“আমি . . . যিহোবার সাহায্য অনুভব করেছিলাম”

ভাই রিন ট্যানড্রুই ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন

রিন নামে একজন ভাইয়ের বয়স ২০-র কোঠার প্রথম দিকে। তিনি আলেটচা ম্যানগুরু নামে পূর্ব মাদাগাস্কারের একটা উর্বর এলাকায় বড়ো হয়ে উঠেছেন। তিনি স্কুলের পড়াশোনায় ভালো ছিলেন আর তাই, উচ্চ শিক্ষা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন করার পর তিনি মন পরিবর্তন করেন। তিনি বলেন: “আমি দশম শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করেছিলাম এবং যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘আমি যদি ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করি, তা হলে আমি অগ্রগামী সেবা শুরু করব।’” দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করার পর ভাই রিন নিজের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি একজন অগ্রগামী ভাইয়ের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, একটা পার্ট-টাইম চাকরি করতে শুরু করেন এবং অগ্রগামীর কাজ আরম্ভ করেন। তিনি বলেন, “সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত।”

তবে, ভাই রিনের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বুঝতে পারেনি যে, কেন তিনি একটা জাগতিক কেরিয়ার বেছে নেননি। তিনি বলেন: “আমার বাবা, কাকা ও ঠাকুরমা, সবাই আমাকে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু, আমি কোনো কিছুর জন্যই অগ্রগামীর কাজ বন্ধ করতে চাইনি।” এর অল্পসময় পরই, ভাই রিন এমন এলাকায় সেবা করতে চান, যেখানে রাজ্যের প্রচারকদের আরও বেশি প্রয়োজন। কেন তার এইরকম আকাঙ্ক্ষা হয়? তিনি বলেন: “একবার, আমাদের বাড়িতে ডাকাতি হয় এবং আমি আমার অনেক জিনিসপত্র হারাই। সেই ডাকাতি আমাকে ‘স্বর্গে ধন’ সঞ্চয় করার বিষয়ে বলা যিশুর কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল। আমি এমন ধন লাভ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেটা যিহোবা আমাদের প্রদান করেন।” (মথি ৬:১৯, ২০) তিনি মাদাগাস্কারের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটা খরা কবলিত এলাকায় চলে যান, যেটা তার বাড়ির এলাকা থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার (৮০০ মাইল) দূরে অবস্থিত। সেই এলাকায় অ্যানট্যানড্রুই লোকেরা বাস করে। কেন তিনি সেখানে যান?

ভাই রিনের বাড়িতে ডাকাতি হওয়ার এক মাস আগে, তিনি দু-জন অ্যানট্যানড্রুই লোকের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। তিনি তাদের ভাষায় কয়েকটা অভিব্যক্তি শিখেছিলেন এবং সেই অগণিত অ্যানট্যানড্রুই লোকের কথা চিন্তা করেছিলেন, যাদের কাছে তখনও রাজ্যের বার্তা গিয়ে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, “আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন তিনি আমাকে ট্যানড্রুইভাষী এলাকায় চলে যেতে সাহায্য করেন।”

ভাই রিন সেই এলাকায় চলে যান। তবে, শীঘ্রই তিনি একটা বাধার সম্মুখীন হন। তিনি সেখানে একটাও চাকরি খুঁজে পান না। একজন ব্যক্তি তাকে বলেন: “তুমি কেন এখানে এসেছ? লোকেরা চাকরি খোঁজার জন্য সেই এলাকায় যায়, যেখান থেকে তুমি এসেছ!” প্রায় দু-সপ্তাহ পর ভাই রিন যখন অন্য একটা জায়গায় আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য যান, তখন তার কাছে থাকা সমস্ত টাকাপয়সা প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে, এরপর তিনি কী করবেন। সেই সম্মেলনের শেষ দিনে একজন ভাই, রিনের কোটের পকেটে কিছু-একটা ভরে দেন। ভাই রিন দেখেন যে, সেই ভাই তার পকেটে অনেক টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা অ্যানট্যানড্রুই এলাকায় ফিরে যাওয়ার ও দই বিক্রি করার একটা ছোট্ট ব্যাবসা শুরু করার জন্য যথেষ্ট ছিল। ভাই রিন বলেন: “আমি একেবারে সঠিক সময় যিহোবার সাহায্য অনুভব করেছিলাম। আমি সেই লোকেদের সাহায্য করা চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম, যাদের আগে কখনো যিহোবার বিষয়ে শেখার সুযোগ হয়নি!” এ ছাড়া, মণ্ডলীতেও অনেক কাজ করার ছিল। ভাই রিন আরও বলেন: “আমাকে এক সপ্তাহ পর পর জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য কার্যভার দেওয়া হতো। যিহোবা তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।” বর্তমানেও, ভাই রিন সেই অগণিত ট্যানড্রুইভাষী লোকের কাছে রাজ্যের বার্তা জানাচ্ছেন, যারা যিহোবার বিষয়ে শিখতে ইচ্ছুক।

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা তাঁর সেবা করার জন্য প্রচেষ্টা করে

যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি সেইসমস্ত ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করবেন, যারা তাঁর সেবা করার জন্য প্রচেষ্টা করে। (যিশা. ৬৫:১৬) আমরা যখন আমাদের পরিচর্যাকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা সত্যিই যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করি। এই প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত বোন সিলভিয়ানার কথা বিবেচনা করুন, যিনি মাদাগাস্কারেই বাস করেন। আপনার হয়তো মনে আছে, তিনি এই ভেবে ভয় পেতেন যে, যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করা তার ক্ষমতার বাইরে। কেন তিনি এইরকমটা ভাবতেন? তিনি বলেন: “আমার ডান-পায়ের চেয়ে বাঁ-পা সাড়ে তিন ইঞ্চি (৯ সেন্টিমিটার) ছোটো। তাই, আমাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় আর এর ফলে, আমি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ি।”

বোন সিলভিয়ানা (বামে) ও বোন সিলভি আন (ডানে) বোন ডোরাটিনের সঙ্গে তার বাপ্তিস্মের দিনে

তা সত্ত্বেও, ২০১৪ সালে সিলভি আন নামে তার মণ্ডলীর একজন যুবতী অগ্রগামী বোনের সঙ্গে বোন সিলভিয়ানা তার বাড়ির এলাকা থেকে ৮৫ কিলোমিটার (৫৩ মাইল) দূরে অবস্থিত একটা ছোট্ট গ্রামে চলে যান। বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও, বোন সিলভিয়ানার স্বপ্ন সত্যি হয় আর তিনি খুবই চমৎকার এক আশীর্বাদ লাভ করেন! তিনি বলেন: ‘আমার নতুন কার্যভারে সেবা শুরু করার মাত্র এক বছর পর ডোরাটিন নামে আমার একজন বাইবেল ছাত্রী একটা সীমা সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।’

“আমি তোমার সাহায্য করিব”

এই যে-সমস্ত ভাই-বোন, যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করছেন, তাদের বিশ্বাসের অভিব্যক্তিগুলো যেমন দেখায়, আমরা যখন আমাদের পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য কোনো বাধাকে কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার দাসদের কাছে করা তাঁর এই প্রতিজ্ঞার সত্যতাকে উপলব্ধি করি: “আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব।” (যিশা. ৪১:১০) এর ফলে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এর পাশাপাশি, আমাদের নিজেদের এলাকায় অথবা বিদেশের কোনো এলাকায় স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া যিহোবার সেবায় সেই কাজগুলোর জন্য আমাদের প্রস্তুত করে, যেগুলো নতুন জগতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আগে উল্লেখিত ভাই ডিড্‌ইয়ে যেমনটা বলেন, “যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করা ভবিষ্যতের জন্য উত্তম প্রশিক্ষণ প্রদান করে!” আমরা আশা করি যেন আরও অনেক ইচ্ছুক কর্মী শীঘ্রই এই প্রশিক্ষণ লাভ করা শুরু করে!

^ অনু. 4 যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য এই উদ্যোগী ভাই-বোনেরা কানাডা, গোয়াডেলুপ, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, নিউ কলিডনিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, লুক্সেমবুর্গ, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেন থেকে এসেছিল।

^ অনু. 8 এই স্কুলের পরিবর্তে এখন রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল পরিচালিত হয়। যে-পূর্ণসময়ের পরিচারকরা বিদেশে সেবা করে এবং এই স্কুলে যোগ দেওয়ার চাহিদাগুলো পূর্ণ করে, তারা তাদের নিজেদের দেশে অথবা অন্য কোনো দেশে গিয়ে এই স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে, যেখানে এই স্কুল তাদের মাতৃভাষায় অথবা তারা সাবলীলভাবে বলতে পারে এমন কোনো ভাষায় পরিচালিত হয়।