মথি লিখিত সুসমাচার ২৪:১-৫১

  • খ্রিস্টের উপস্থিতির চিহ্ন (১-৫১)

    • যুদ্ধ, খাদ্যের অভাব, ভূমিকম্প ()

    • সুসমাচার প্রচার করা হবে (১৪)

    • মহাক্লেশ (২১, ২২)

    • মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন (৩০)

    • ডুমুর গাছ (৩২-৩৪)

    • নোহের দিনের মতো (৩৭-৩৯)

    • জেগে থেকো (৪২-৪৪)

    • বিশ্বস্ত দাস এবং মন্দ দাস (৪৫-৫১)

২৪  পরে যিশু যখন মন্দির থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে সম্পূর্ণ মন্দিরটা দেখানোর জন্য তাঁর কাছে এলেন। ২  এতে যিশু তাদের বললেন: “তোমরা কি এইসমস্ত বড়ো বড়ো দালান দেখে আশ্চর্য হচ্ছ? আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এগুলোর একটা পাথরও আরেকটা পাথরের উপর থাকবে না, সবই ধ্বংস করা হবে।” ৩  তিনি যখন জৈতুন পর্বতে বসে ছিলেন, তখন শিষ্যেরা একান্তে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: “আমাদের বলুন তো, এইসমস্ত বিষয় কখন ঘটবে আর আপনার উপস্থিতির* এবং এই বিধিব্যবস্থার* শেষ সময়ের চিহ্ন কী?” ৪  উত্তরে যিশু তাদের বললেন: “সাবধান, কেউ যেন তোমাদের ভ্রান্ত না করে, ৫  কারণ অনেকে আমার নাম ধরে আসবে, বলবে, ‘আমিই সেই খ্রিস্ট’ আর এভাবে অনেককে ভ্রান্ত করবে। ৬  তোমরা যুদ্ধের আওয়াজ এবং যুদ্ধের খবর শুনবে। তবে দেখো, তোমরা আতঙ্কিত হোয়ো না কারণ এগুলো অবশ্যই ঘটবে, কিন্তু তখনও শেষ নয়। ৭  “কারণ এক জাতি আরেক জাতিকে এবং এক রাজ্য আরেক রাজ্যকে আক্রমণ করবে আর একের-পর-এক স্থানে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে এবং ভূমিকম্প হবে। ৮  এই সমস্ত কিছুই যন্ত্রণার* আরম্ভ মাত্র। ৯  “সেই সময়ে, লোকেরা তোমাদের তাড়না করবে এবং তোমাদের হত্যা করবে আর আমার নামের জন্য সমস্ত জাতি তোমাদের ঘৃণা করবে। ১০  এ ছাড়া, অনেকে ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস হারাবে,* একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং একে অন্যকে ঘৃণা করবে। ১১  অনেক মিথ্যা ভাববাদী উঠবে এবং অনেককে ভ্রান্ত করবে; ১২  আর যেহেতু মন্দতা বৃদ্ধি পাবে, তাই অধিকাংশ লোকের প্রেম কমে যাবে। ১৩  কিন্তু, যে-কেউ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে, সে-ই রক্ষা পাবে। ১৪  আর সমস্ত জাতি যেন রাজ্যের সুসমাচার জানতে পারে, তাই পুরো পৃথিবীতে এই সুসমাচার প্রচার করা হবে এবং এরপর শেষ আসবে। ১৫  “কিন্তু, তোমরা যখন দেখবে, সেই ধ্বংসাত্মক ঘৃণ্য বস্তু, যেটার বিষয়ে ভাববাদী দানিয়েল বলেছিলেন, পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে আছে, (যে পাঠ করে, সে বিচক্ষণতা ব্যবহার করুক), ১৬  তখন যারা যিহূদিয়াতে থাকে, তারা পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে যাক। ১৭  যে-ব্যক্তি ছাদের উপরে থাকে, সে বাড়ি থেকে কিছু নেওয়ার জন্য নীচে না নামুক ১৮  আর যে-ব্যক্তি জমিতে কাজ করতে থাকে, সে নিজের চাদর নেওয়ার জন্য ফিরে না আসুক। ১৯  সেই সময়ে গর্ভবতী নারীদের এবং স্তন্যদাত্রী মায়েদের কত কষ্টই-না হবে! ২০  প্রার্থনা কোরো,* যেন তোমাদের শীত কালে কিংবা বিশ্রামবারে* পালাতে না হয়; ২১  কারণ সেই সময়ে এমন মহাক্লেশ হবে, যা এই জগতের শুরু থেকে এই পর্যন্ত কখনো হয়নি এবং আর কখনো হবেও না। ২২  আসলে, সেই দিনের সংখ্যা যদি কমিয়ে দেওয়া না হতো, তা হলে কেউই রক্ষা পেত না; কিন্তু মনোনীত ব্যক্তিদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হবে। ২৩  “আর সেই সময় কেউ যদি তোমাদের বলে, ‘দেখো! খ্রিস্ট এখানে’ কিংবা ‘তিনি ওখানে!’ তা হলে তোমরা তা বিশ্বাস কোরো না। ২৪  কারণ অনেক মিথ্যা খ্রিস্ট এবং মিথ্যা ভাববাদী উঠবে আর তারা মহৎ মহৎ চিহ্ন দেখাবে এবং আশ্চর্য কাজ করবে, যাতে এমনকী মনোনীত ব্যক্তিদেরও ভ্রান্ত করতে পারে। ২৫  দেখো! আমি তোমাদের আগে থেকেই সাবধান করে দিলাম।  ২৬  তাই, লোকেরা যদি তোমাদের বলে, ‘দেখো! তিনি প্রান্তরে,’ তা হলে সেখানে যেয়ো না; ‘দেখো! তিনি ভিতরের ঘরে,’ তা হলে তোমরা তা বিশ্বাস কোরো না। ২৭  কারণ আকাশে বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব দিকে চমকালে পশ্চিম দিক থেকেও দেখা যায়, মনুষ্যপুত্রের* উপস্থিতি* তেমনই হবে। ২৮  যেখানে মরদেহ থাকে, সেখানে ইগল* জড়ো হয়। ২৯  “আর সেই সময়, সেই ক্লেশের ঠিক পরেই, সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, আকাশ থেকে তারা খসে পড়বে এবং আকাশমণ্ডলের শক্তিগুলো আলোড়িত হবে। ৩০  তখন আকাশে মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন দেখা যাবে এবং সমস্ত জাতির লোক প্রচণ্ড দুঃখে নিজেদের বুক চাপড়াবে। আর তারা মনুষ্যপুত্রকে ক্ষমতা ও মহাগৌরবের সঙ্গে মেঘের মধ্যে আসতে দেখবে। ৩১  আর তিনি মহাতূরীধ্বনি সহকারে তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠাবেন এবং তারা আকাশের এক সীমা থেকে আরেক সীমা পর্যন্ত, চার বায়ু* থেকে তাঁর মনোনীত ব্যক্তিদের একত্র করবেন। ৩২  “তোমরা ডুমুর গাছের দৃষ্টান্ত থেকে শেখো: যখন এর শাখা কোমল হয়ে পাতা বের হয়, তখন তোমরা বুঝতে পার, গ্রীষ্ম কাল কাছে এসে গিয়েছে। ৩৩  একইভাবে, তোমরা যখন এইসমস্ত ঘটনা ঘটতে দেখবে, তখন বুঝবে যে, তিনি খুব কাছে এসে গিয়েছেন, এমনকী দরজায় উপস্থিত। ৩৪  আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এইসমস্ত ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত এই প্রজন্ম কোনোভাবেই লোপ পাবে না। ৩৫  আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী লোপ পাবে, কিন্তু আমার বাক্য কোনোভাবেই লোপ পাবে না। ৩৬  “সেই দিন এবং সেই সময়ের কথা কেউই জানে না, স্বর্গদূতেরাও জানেন না, পুত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন। ৩৭  কারণ নোহের দিনে পরিস্থিতি যেমন ছিল, মনুষ্যপুত্রের উপস্থিতির* সময়ে পরিস্থিতি তেমনই হবে। ৩৮  কারণ জল­প্লাবনের আগে নোহ জাহাজে প্রবেশ করার দিন পর্যন্ত লোকেরা ভোজন ও পান করত, পুরুষেরা বিয়ে করত এবং নারীদের বিয়ে দেওয়া হতো ৩৯  আর জলপ্লাবন এসে তাদের সকলকে ভাসিয়ে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তারা কোনো মনোযোগ দেয়নি। মনুষ্যপুত্রের উপস্থিতির সময়ও ঠিক তা-ই ঘটবে। ৪০  তখন জমিতে দু-জন পুরুষ কাজ করতে থাকবে; ঈশ্বর একজনকে নিয়ে যাবেন, কিন্তু অন্য জনকে রেখে যাবেন। ৪১  দু-জন মহিলা জাঁতা পিষবে; ঈশ্বর একজনকে নিয়ে যাবেন, কিন্তু অন্য জনকে রেখে যাবেন। ৪২  তাই, তোমরা জেগে থেকো, কারণ তোমাদের প্রভু কোন দিন আসবেন, তা তোমরা জান না। ৪৩  “কিন্তু, এটা জেনে রাখ: বাড়ির মালিক যদি জানত যে, চোর কোন প্রহরে* আসবে, তা হলে সে সজাগ থাকত এবং চোরকে তার বাড়িতে সিঁধ কেটে প্রবেশ করতে দিত না। ৪৪  এইজন্য, তোমরাও সর্বদা প্রস্তুত থেকো, কারণ যে-সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই মনুষ্যপুত্র আসবেন। ৪৫  “সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান* দাস কে, যাকে তার প্রভু নিজ বাড়ির দাসদের উপরে নিযুক্ত করেছেন, যেন সে উপযুক্ত সময়ে তাদের খাবার দেয়? ৪৬  সুখী সেই দাস, যদি তার প্রভু এসে তাকে সেই কাজ করতে দেখেন! ৪৭  আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি সেই দাসকে তার সমস্ত বিষয়সম্পত্তির উপর নিযুক্ত করবেন। ৪৮  “কিন্তু, যদি সেই দাস মন্দ হয় এবং মনে মনে বলে, ‘আমার প্রভুর আসতে দেরি হচ্ছে’ ৪৯  আর সে তার সহদাসদের ধরে মারধর করতে এবং মাতালদের সঙ্গে ভোজন ও পান করতে শুরু করে, ৫০  তা হলে যে-দিন সে অপেক্ষা করবে না এবং যে-সময়ের কথা সে জানবে না, সেই দিন এবং সেই সময়ে তার প্রভু আসবেন। ৫১  আর তার প্রভু তাকে চরম শাস্তি দেবেন এবং সেই স্থানে নিক্ষেপ করবেন, যেখানে ভণ্ডদের নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে সে কাঁদবে এবং দাঁত কিড়মিড় করবে।

পাদটীকাগুলো

শব্দকোষ দেখুন।
বা “যুগের।” শব্দকোষ দেখুন।
আক্ষ., “প্রসববেদনার মতো যন্ত্রণার।”
বা “অনেকে হোঁচট খাবে।”
মূল ভাষায় যে-ক্রিয়া পদ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা ক্রমাগত প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে।
শব্দকোষ দেখুন।
যিশু নিজের সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। শব্দকোষ দেখুন।
শব্দকোষ দেখুন।
কিছু প্রজাতির ইগল মরদেহ খেয়ে থাকে।
অর্থাৎ প্রধান চারটে দিক।
শব্দকোষ দেখুন।
বা “চোর রাতে কোন সময়ে।”
বা “বিচক্ষণ।”