সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিয়ের প্রথম বছর টিকে থাকা

বিয়ের প্রথম বছর টিকে থাকা

পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি

বিয়ের প্রথম বছর টিকে থাকা

স্বামী বলেন: “এটা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই যে, আমার স্ত্রী ও আমি কত আলাদা! উদাহরণস্বরূপ, আমি ঘুম থেকে সকাল সকাল ওঠা পছন্দ করি আর সে দেরিতে ওঠা পছন্দ করে। তার মেজাজ পরিবর্তনের বিষয়টা আমি বুঝতে পারি না! আর আরেকটা বিষয় হল, আমি যখন রান্না করি, তখন সে প্রতিটা ব্যাপারে খুঁত ধরে, বিশেষ করে বাসন মোছার কাপড়ে আমি যেভাবে হাত মুছি।”

স্ত্রী বলেন: “আমার স্বামী বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। কিন্তু, আমি আমার পরিবারে বেশি কথা বলতাম। তারা খুব কথা বলে, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার সময়গুলোতে। আর আমার স্বামী যখন রান্না করে, তখন সে একই কাপড় থালাবাসন ও সেইসঙ্গে তার হাত মোছার জন্য ব্যবহার করে! এটা আমাকে বিরক্ত করে তোলে! কেন পুরুষদেরকে বোঝা এত কঠিন? কীভাবে লোকেরা একটা বিয়েকে সফল করে তোলে?”

আপনি যদি নববিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনিও কি একই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন? এমনটা কি মনে হয় যে, আপনার সাথি হঠাৎ করে সেই ভুলত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো অর্জন করেছে, যেগুলো আপনাদের ডেটিং করার সময় দেখা যায়নি? কীভাবে আপনি “বিবাহিত ব্যক্তিরা দৈনন্দিন যে-সমস্যাগুলো ভোগ করবে” সেগুলোর প্রভাবকে কমাতে পারেন?—১ করিন্থীয় ৭:২৮, টুডেজ ইংলিশ ভারসন।

প্রথমত, এমনটা আশা করবেন না যে, আপনারা দুজনেই বিয়ের অঙ্গীকার করেছেন বলে, আপনি ও আপনার সাথি সঙ্গেসঙ্গে বিবাহিত জীবনে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। অবিবাহিত থাকার সময়ে আপনি হয়তো মূল্যবান সামাজিক দক্ষতাগুলো অর্জন করেছিলেন আর আপনার ডেটিং করার সময়ে সেগুলো হয়তো বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু, বিয়ে সেই দক্ষতাগুলোকে নতুনভাবে পরীক্ষায় ফেলবে আর খুব সম্ভবত এর ফলে আপনাকে নতুন দক্ষতাগুলো গড়ে তুলতে হবে। আপনি কি ভুলত্রুটি করবেন? নিশ্চয়ই। আপনার যে-দক্ষতাগুলো প্রয়োজন সেগুলো কি আপনি অর্জন করতে পারেন? অবশ্যই!

যেকোনো দক্ষতাকে বৃদ্ধি করার সর্বোত্তম উপায় হল, সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ একজনের সঙ্গে পরামর্শ করা আর তারপর তিনি যে-পরামর্শ দেন, সেটাকে কাজে লাগানো। বিয়ের বিষয়ে যিহোবা ঈশ্বরই হলেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা। সর্বোপরি, বিয়ে করার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে তিনিই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। (আদিপুস্তক ২:২২-২৪) কীভাবে তাঁর বাক্য বাইবেল আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে ও বিয়ের প্রথম বছরের পরেও, আপনার বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলোকে অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে, তা লক্ষ করুন।

দক্ষতা ১. একসঙ্গে পরামর্শ করতে শিখুন

কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো রয়েছে? কেজি * নামে একজন স্বামী যিনি জাপানে বাস করেন, তিনি কখনো কখনো একথা ভুলে যেতেন যে, তার সিদ্ধান্তগুলো তার সাথিকে প্রভাবিত করত। “আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ না করেই আমি নিমন্ত্রণগুলোকে গ্রহণ করতাম,” তিনি বলেন। “পরে, আমি বুঝতে পারতাম যে, সেই নিমন্ত্রণগুলো রাখা তার পক্ষে সুবিধাজনক ছিল না।” অ্যালেন নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন স্বামী বলেন: “আমি মনে করতাম যে, প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার বিষয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা পুরুষোচিত ছিল না।” তার পটভূমির কারণে তিনি এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ডায়েনের ক্ষেত্রেও বিষয়টা সত্য ছিল, যিনি ব্রিটেনে বাস করেন। তিনি বলেন: “আমি আমার পরিবারের কাছেই পরামর্শ চাইতাম। তাই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময়, আমি প্রথমে আমার স্বামীর সঙ্গে নয় বরং তাদের সঙ্গেই পরামর্শ করতাম।”

সমাধানটা কী? মনে রাখবেন যে, যিহোবা ঈশ্বর বিবাহিত দম্পতিকে “একাঙ্গ” হিসেবে দেখে থাকেন। (মথি ১৯:৩-৬) তাঁর দৃষ্টিতে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যে-সম্পর্ক বিদ্যমান, সেটার চেয়ে আর কোনো মানব সম্পর্কই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়! সেই বন্ধনকে দৃঢ় রাখার জন্য উত্তম ভাববিনিময় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যিহোবা ঈশ্বর অব্রাহামের সঙ্গে যেভাবে ভাববিনিময় করেছিলেন, তা পরীক্ষা করার দ্বারা একজন স্বামী ও স্ত্রী অনেক কিছু শিখতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, দয়া করে আদিপুস্তক ১৮:১৭-৩৩ পদে লিপিবদ্ধ আলোচনাটি পড়ুন। লক্ষ করুন যে, ঈশ্বর তিনটে উপায়ে অব্রাহামকে সম্মানিত করেছিলেন। (১) যিহোবা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তিনি কী করতে চলেছেন। (২) অব্রাহাম যখন তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, তখন তিনি তা শুনেছিলেন। (৩) অব্রাহামের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল রেখে যিহোবা যতটা সম্ভব, তাঁর কাজের ধারাকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। কীভাবে আপনি আপনার সাথির সঙ্গে পরামর্শ করার সময় এই একই আদর্শকে অনুসরণ করতে পারেন?

এটা করে দেখুন: আপনার বিবাহিত সাথিকে প্রভাবিত করবে এমন বিষয়গুলো আলোচনা করার সময়, (১) ব্যাখ্যা করুন যে, আপনি কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চান কিন্তু সেইসঙ্গে আপনার চিন্তাভাবনাকে শেষ সিদ্ধান্ত বা সতর্কবাণী হিসেবে নয় বরং প্রস্তাবনা হিসেবে তুলে ধরুন; (২) আপনার সাথিকে তার মতামত প্রকাশ করতে বলুন ও আপনার সাথির এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রাখার অধিকারকে স্বীকার করুন; এবং (৩) যখনই সম্ভব, আপনার সাথির পছন্দগুলোকে মেনে নেওয়ার দ্বারা ‘[আপনার] শান্ত ভাব [“যুক্তিবাদিতা,” NW] বিদিত হইতে’ দিন। —ফিলিপীয় ৪:৫.

দক্ষতা ২. কৌশলী হতে শিখুন

কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে? আপনার পরিবারগত অথবা সংস্কৃতিগত পটভূমির কারণে আপনার হয়তো দৃঢ়ভাবে, এমনকী স্পষ্টভাবে আপনার মতামত প্রকাশ করার অভ্যাস রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, লিয়াম যিনি ইউরোপে বাস করেন, তিনি বলেন: “আমি যে-পটভূমি থেকে এসেছি, সেখানকার লোকেরা স্পষ্টবাদী। আমার স্পষ্টভাবে নিজেকে প্রকাশ করা প্রায়ই আমার স্ত্রীকে দুঃখিত করত। আমাকে আরও বেশি কোমল হতে শিখতে হয়েছে।”

সমাধানটা কী? এমনটা ধরে নেবেন না যে, আপনার সাথিও সেই একইভাবে কথা বলবেন, যেভাবে আপনি বলতে অভ্যস্ত। (ফিলিপীয় ২:৩, ৪) প্রেরিত পৌল একজন মিশনারিকে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা নববিবাহিতদের জন্যও সাহায্যকারী। তিনি লিখেছিলেন: ‘যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু কোমল হওয়া উচিত।’ মূল গ্রিক ভাষায়, যে-শব্দটিকে “কোমল” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটিকে “কৌশলী” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। (২ তীমথিয় ২:২৪; পাদটীকা, NW) কৌশলতা হল কোনো পরিস্থিতিতে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারার ও বিষয়টা সদয়ভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা।

এটা করে দেখুন: আপনি যখন সাথির প্রতি বিরক্ত হন, তখন কল্পনা করুন যে, আপনি আপনার সাথির সঙ্গে কথা বলার পরিবর্তে, একজন উত্তম বন্ধু অথবা আপনার নিয়োগকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন। তখনও কি আপনি একই স্বরে কথা বলবেন অথবা একই শব্দগুলো বেছে নেবেন? তাহলে যে-কারণে আপনার বন্ধু অথবা নিয়োগকর্তার চেয়ে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে এমনকী আরও বেশি সম্মান ও কৌশলতার সঙ্গে কথা বলা উপযুক্ত হবে, তার কারণগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করুন।—কলসীয় ৪:৬.

দক্ষতা ৩. আপনার নতুন ভূমিকার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখুন

কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে? একজন স্বামী হয়তো প্রথমে ভুলভাবে তার মস্তকপদকে ব্যবহার করতে পারেন অথবা একজন স্ত্রী হয়তো কৌশলে প্রস্তাবনাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে অনভ্যস্ত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আন্তনিয়ো নামে ইতালির একজন স্বামী বলেন: “আমার বাবা কখনোই পারিবারিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আমার মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করতেন না। তাই, প্রথমে আমি এমনভাবে আমার পরিবারের ওপর শাসন করতাম যেন আমি একজন রাজা।” ডেবি নামে কানাডার একজন স্ত্রী বলেন: “আমি চেয়েছিলাম যে, আমার স্বামী যেন পরিপাটী থাকে। কিন্তু আমার প্রভুত্বপূর্ণ আচরণ তাকে কেবল আরও বেশি একগুঁয়েই করে তুলত বলে মনে হয়।”

একজন স্বামীর জন্য সমাধানটা কী? কিছু স্বামী, স্ত্রীর বশীভূত হওয়া সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেটাকে বাবা-মায়ের প্রতি একজন সন্তানের বাধ্য হওয়া সম্বন্ধে এটি যা বলে, সেটার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। (কলসীয় ৩:২০; ১ পিতর ৩:১) কিন্তু, বাইবেল বলে যে, একজন স্বামী “আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সে দুই জন একাঙ্গ হইবে”; বাবা-মা ও সন্তান সম্বন্ধে এটি একই বিষয় বলে না। (মথি ১৯:৫) যিহোবা একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর এক অনুরূপ হিসেবে বর্ণনা করেন। (আদিপুস্তক ২:১৮) তিনি কখনো একজন সন্তানকে বাবা-মায়ের এক অনুরূপ হিসেবে নির্দেশ করেননি। আপনার কী মনে হয়—একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে একজন সন্তানের মতো আচরণ করেন, তাহলে তিনি কি বিবাহের ব্যবস্থাকে সম্মান করছেন?

বস্তুত, ঈশ্বরের বাক্য আপনাকে জোরালো পরামর্শ দেয় যে, আপনি যেন আপনার স্ত্রীর সঙ্গে ঠিক সেইভাবেই আচরণ করেন, যেভাবে যিশু খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে আচরণ করেন। আপনি আপনার স্ত্রীর জন্য আপনাকে তার মস্তক হিসেবে দেখাকে আরও সহজ করতে পারেন, (১) যদি আপনি আশা না করেন যে, তিনি তৎক্ষণাৎ ও ত্রুটিহীনভাবে আপনার প্রতি বশীভূত হবেন এবং (২) যদি আপনি তাকে আপনার নিজ দেহের মতো ভালোবাসেন, এমনকী যখন কঠিন পরিস্থিতিগুলো দেখা দেয় তখনও।—ইফিষীয় ৫:২৫-২৯.

একজন স্ত্রীর জন্য সমাধানটা কী? এটা স্বীকার করুন যে, এখন আপনার স্বামী হলেন আপনার ঈশ্বর-নিযুক্ত মস্তক। (১ করিন্থীয় ১১:৩) আপনি যদি আপনার স্বামীকে সম্মান করেন, তাহলে আপনি ঈশ্বরকেও সম্মান করেন। আপনি যদি তার মস্তকপদকে অগ্রাহ্য করেন, তাহলে আপনি শুধু আপনার স্বামী সম্বন্ধেই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বর ও তাঁর চাহিদাগুলো সম্বন্ধে কেমন বোধ করেন, সেটাও প্রকাশ করেন।—কলসীয় ৩:১৮.

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় আপনার স্বামীর চরিত্রকে নয়, বরং সমস্যাটাকে আক্রমণ করতে শিখুন। উদাহরণস্বরূপ, ইষ্টের রাণী চেয়েছিলেন তার স্বামী রাজা অহশ্বেরশ যেন একটা অবিচারকে শুধরান। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আক্রমণ করার পরিবর্তে, ইষ্টের নিজের কথাগুলো কৌশলে প্রকাশ করেছিলেন। তার স্বামী তার পরামর্শ মেনে নিয়েছিলেন ও পরিশেষে সঠিক কাজটা করেছিলেন। (ইষ্টের ৭:১-৪; ৮:৩-৮) খুব সম্ভবত আপনার স্বামী আপনাকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে শিখবেন যদি (১) আপনি তাকে পরিবারের মস্তক হিসেবে তার নতুন ভূমিকায় দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য সময় দেন এবং (২) তার সঙ্গে সম্মানপূর্বক আচরণ করেন, এমনকী যখন তিনি ভুলত্রুটিও করে থাকেন।—ইফিষীয় ৫:৩৩.

এটা করে দেখুন: সেই দোষগুলো, যেগুলোকে আপনার সাথির পরিবর্তন করা উচিত বলে আপনি মনে করেন, সেগুলোকে না খুঁজে বরং আপনার নিজের যে-পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন, সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। স্বামীরা: আপনি যেভাবে আপনার মস্তকপদকে ব্যবহার করেন তাতে অথবা যখন মস্তকপদকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আপনার স্ত্রীকে দুঃখিত করেন, তখন কীভাবে আপনি উন্নতি করতে পারেন, তা তাকে জিজ্ঞেস করুন আর তারপর সেই প্রস্তাবটি লিখে রাখুন। স্ত্রীরা: যখন আপনার স্বামী মনে করেন যে, তার প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে না, তখন কীভাবে আপনি উন্নতি করতে পারেন, তা তাকে জিজ্ঞেস করুন আর সেই প্রস্তাবটির প্রতি মনোযোগ দিন।

যুক্তিযুক্ত প্রত্যাশাগুলো বজায় রাখুন

এক সুখী, ভারসাম্যপূর্ণ বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখতে শেখা হল, একটা সাইকেল চালাতে শেখার মতো। একজন সাইকেল আরোহী হিসেবে আত্মবিশ্বাস অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি কয়েকবার পড়ে যাওয়া আশা করেন। একইভাবে, বিবাহে অভিজ্ঞতা অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি যে অস্বস্তিকর কিছু ভুল করবেন, তা আপনার আশা করা উচিত।

রসিকতা বোধ বজায় রাখুন। আপনার সাথির উদ্‌বেগগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন কিন্তু আপনার নিজের ভুলগুলোতে হাসতে শিখুন। আপনার বিয়ের প্রথম বছরে আপনার সাথিকে আনন্দে রাখার জন্য সুযোগগুলোকে খুঁজে দিন। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:৫) সর্বোপরি, ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা আপনাদের সম্পর্ককে পরিচালিত হতে দিন। আপনি যদি তা করেন, তাহলে আপনাদের বিয়ে বছরের পর বছর আরও দৃঢ় হবে। (w১০-E ০৮/০১)

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন . . .

▪ আমি কি আমার সাথিকে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু করেছি অথবা আমি কি অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পছন্দ করি?

▪ বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে, বিশেষ করে আমি কী করেছি যা দেখায় যে, আমি আমার সাথিকে ভালোবাসি ও সম্মান করি?

[৩০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

বাইবেল আমাদের বিয়েকে রক্ষা করেছে

তোরু ও আকিকো যখন প্রথম বিয়ে করেছিল, তখন তারা একে অপরকে ভালোবাসত। কিন্তু মাত্র আট মাস পরেই এই জাপানি দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যা ঘটেছিল, তা তারা বর্ণনা করে।

তোরু: “আমি দেখেছিলাম যে, আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে আমার স্ত্রী ও আমার মধ্যে কমই মিল রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিভিশন দেখার সময় আমি খেলাধুলা দেখতে পছন্দ করতাম কিন্তু সে নাটক দেখতে পছন্দ করত। আমি বাইরে যেতে পছন্দ করতাম কিন্তু সে ঘরে থাকতেই পছন্দ করত।”

আকিকো: “তোরুর পরিবার যা বলত সে তা-ই করত কিন্তু সে আমার সঙ্গে পরামর্শ করত না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কে তোমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তোমার মা না আমি?’ এ ছাড়া, তোরু যেভাবে সত্যকে ঢেকে রাখত তাতে আমি হতভম্ব হয়ে যেতাম। আমি তাকে বলেছিলাম যে, একটা মিথ্যা বলা আরেকটা মিথ্যা বলার দিকে পরিচালিত করে আর সে যদি তা করা বন্ধ না করে, তাহলে আমাদের বিয়ে টিকবে না।”

তোরু: “আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম আর কীভাবে আমার স্ত্রীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ সহকর্মীর কাছে আমি পরামর্শ চেয়েছিলাম। ‘শুধু তাকে বলুন, চুপ করো,’ তিনি বলেছিলেন। ‘তিনি যদি অভিযোগ করেন, তাহলে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিন।’ একবার আমি আকিকোর মুখে চড় মেরেছিলাম ও টেবিলটা উলটে ফেলেছিলাম। তখন বড়ো ঝগড়া হয়ে গিয়েছিল আর সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমাকে টোকিওর একটা হোটেল থেকে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছিল। পরিশেষে, আমরা বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেইদিন সকালে আমি যখন অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম, তখন আমার স্ত্রী জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করেছিল।”

আকিকো: “আমি যখন সামনের দরজার দিকে আমার ব্যাগগুলো নিয়ে আসছিলাম, তখন কলিংবেল বেজে উঠেছিল। সেখানে একজন ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন যিহোবার সাক্ষি। আমি তাকে ভিতরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।”

তোরু: “আমি যখন আমার অফিসে পৌঁছেছিলাম, তখন আমি বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়টা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো চিন্তা করছিলাম, তাই আমি শীঘ্র বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। আমি যখন বাড়ি পৌঁছেছিলাম, তখন আমি দেখেছিলাম যে, আকিকো এই ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলছে। ভদ্রমহিলাটি আমাকে বলেছিলেন: ‘আপনাদের এমন কিছুর প্রয়োজন রয়েছে যা আপনারা দুজনে একসঙ্গে করতে পারেন। আপনারা কি বাইবেল অধ্যয়ন করতে চান?’ ‘হ্যাঁ,’ আমি বলেছিলাম, ‘এমন যেকোনো কিছু করতে চাই যা আমাদের বিয়েকে রক্ষা করতে পারে!’”

আকিকো: “সেই ভদ্রমহিলা আমাদের জন্য বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সন্ধিক্ষণটা তখনই এসেছিল যখন আমরা বিবাহ ব্যবস্থা সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণটি পড়েছিলাম। এটি বলে: ‘এই কারণ মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।’”—আদিপুস্তক ২:২৪.

তোরু: “আমি তখনই বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলাম। আমি আমার বাবা-মাকে বলেছিলাম যে, ‘এখন থেকে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার আগে আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’ এ ছাড়া, আমি খুব বেশি মদ্যপান করাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আর আমি যখন শিখেছিলাম যে, ঈশ্বর মিথ্যা কথা বলাকে ঘৃণা করেন, তখন আমি কেবল সত্য কথা বলারই চেষ্টা করতাম।”

আকিকো: “আমিও পরিবর্তিত হয়েছিলাম। উদাহরণস্বরূপ, আমি তোরুকে অবজ্ঞা করতাম। কিন্তু আমি যখন দেখেছিলাম যে, সে কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলোকে প্রয়োগ করছে, তখন আমি তাকে আরও বেশি করে সমর্থন করতে শুরু করেছিলাম। (ইফিষীয় ৫:২২-২৪) এখন ২৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা সুখে বিবাহিত জীবনযাপন করছি। আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার ও বাইবেলে পাওয়া বিজ্ঞ পরামর্শকে প্রয়োগ করার দ্বারা আমাদের সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।”