সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

যে-কয়েদিদের পোশাকে বেগুনি ত্রিভুজ লাগানো ছিল

যে-কয়েদিদের পোশাকে বেগুনি ত্রিভুজ লাগানো ছিল

 মড ফ্রান্সে থাকেন এবং তিনি একটা স্কুলে কাজ করেন, যেখানে ক্লাস চলাকালীন সময়ে তিনি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন। একবার একটা ক্লাসে বাচ্চাদের নাতসিদের দ্বারা গণহত্যা (হলোকাস্ট) এবং নাতসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প সম্বন্ধে পড়ানো হচ্ছিল। সেই ক্যাম্পে কয়েদিরা যে-পোশাক পরত, সেটাতে একটা ছোটো কাপড়ের টুকরো সেলাই করা থাকত। সেই ছোটো কাপড়ের টুকরোর রং এবং আকৃতি থেকে বোঝা যেত যে, তাদের সেখানে কেন বন্দি করা হয়েছে।

 ক্যাম্পের কিছু বন্দিদের পোশাকে বেগুনি রঙের ত্রিভুজ আকৃতির একটা ছোটো কাপড় লাগানো ছিল। তাদের সম্বন্ধে টিচার বলেছিলেন, “আমার মনে হয় তারা সমকামী ছিল।” ক্লাস শেষে মড টিচারের কাছে যান এবং তাকে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, নাতসিরা যিহোবার সাক্ষিদের আলাদা করার জন্য বেগুনি ত্রিভুজ ব্যবহার করেছিল। a আর তিনি এই বিষয়ে টিচারের সঙ্গে আরও কিছু তথ্য শেয়ার করতে চান। টিচার তাতে রাজি হন এবং সেই তথ্যগুলো বাচ্চাদের সঙ্গেও শেয়ার করার জন্য বলেন।

 একই বিষয়ের উপর অন্য আরেকজন টিচার ক্লাস নেওয়ার সময় একটা চার্ট দেখিয়েছিলেন। সেই চার্টে বিভিন্ন ধরনের চিহ্নের ছবি ছিল, যেগুলো নাতসিরা তাদের বন্দিদের জন্য ব্যবহার করেছিল। এই চার্টে সঠিক তথ্য লেখা ছিল যে, বেগুনি ত্রিভুজ যিহোবার সাক্ষিদেরকে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। ক্লাস শেষে মড এই টিচারের সঙ্গেও কিছু তথ্য শেয়ার করতে চান। এই টিচারও তাতে রাজি হন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সেই তথ্য শেয়ার করার ব্যবস্থা করেন।

তার প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করা প্রকাশনাগুলো হাতে নিয়ে মড দাঁড়িয়ে রয়েছেন

 প্রথম টিচারের ক্লাসের জন্য মড ১৫ মিনিটের একটা প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু যখন তার কথা বলার সময় আসে, তখন টিচার তাকে বলেছিলেন, “আপনি পুরো এক ঘণ্টা সময় নিতে পারেন।” প্রথমে মড যিহোবার সাক্ষিদের উপর নাতসিদের করা তাড়নার বিষয়ে একটা ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখান। সেই ডকুমেন্টারিতে যখন দেখানো হচ্ছিল যে, নাতসিরা যিহোবার সাক্ষি বাবা-মায়েদের কাছ থেকে ৮০০ জন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গিয়েছিল, তখন মড ভিডিওটা সেখানে থামান এবং সেই বাচ্চাদের মধ্যে থেকে তিন জনের অভিজ্ঞতা পড়ে শোনান। ভিডিওটা শেষ হওয়ার পর, মড একটা বিদায় পত্র পড়ে তার প্রেজেন্টেশন শেষ করেন। এই বিদায় পত্রটা ১৯৪০ সালে ১৯ বছর বয়সি একজন অস্ট্রিয়ান যিহোবার সাক্ষি গেয়ারহার্ট শ্টাইনাখার তার বাবা-মাকে লিখেছিল। আর এর কয়েক ঘণ্টা পর নাতসিরা তাকে হত্যা করেছিল। b

 দ্বিতীয় টিচারের ক্লাসে মড একই ধরনের প্রকাশনা ব্যবহার করেছিলেন। মড সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে ভালো ফলাফল পেয়েছিলেন। এখন এই দু-জন টিচারই এই বিষয়ে খেয়াল রাখেন যে, নাতসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের সম্বন্ধে বাচ্চাদের শেখানোর সময়ে তারা যেন যিহোবার সাক্ষিদের বিষয়েও উল্লেখ করেন।

a দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির যিহোবার সাক্ষিরা, যারা সেই সময়ে বিবেলফর্শার (বাইবেল ছাত্র) নামে পরিচিত ছিল, তাদেরকে ক্যাম্পে বন্দি করা হয়েছিল কারণ তারা নাতসিদের সমর্থন করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

b গেয়ারহার্ট শ্টাইনাখারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল কারণ সে জার্মান আর্মিতে যোগ দিতে প্রত্যাখান করেছিল। সে তার বিদায় পত্রে লিখেছিল: “আমি তো এখনও ছোটো। শুধুমাত্র প্রভুর শক্তিতেই আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারব আর আমি তাঁর কাছে সেই নিবেদনই করি।” পরদিন সকালে গেয়ারহার্টকে মেরে ফেলা হয়। তার সমাধিস্তম্ভে এই কথাগুলো লেখা: “তিনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য মৃত্যুকে মেনে নেন।”