সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

ওক গাছে বসে যিহোবার কাছে করা প্রার্থনা

ওক গাছে বসে যিহোবার কাছে করা প্রার্থনা

 রেচেল এখন ডমিনিকান রিপাবলিকে থাকেন। তিনি বলেন: “আমার যখন জন্ম হয়, তখন আমার বাবা-মা যিহোবাকে সেবা করতেন। দুঃখের বিষয় হল, আমার যখন সাত বছর বয়স, তখন আমার বাবা যিহোবার লোকদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেন আর সত্যের চরম বিরোধিতা করেন। আর আমি যাতে সত্য উপাসনা করতে না পারি, সেইজন্য তিনি আমাকে অনেক বাধা দিতেন। যিহোবার সেবা বন্ধ করানোর জন্য তিনি আমাকে বিভিন্ন জিনিস দেওয়ার কথা বলে লোভ দেখাতেন, যেমন ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া অথবা মোবাইল ফোন কিংবা ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার কথা বলতেন। আবার মাঝে মাঝে তিনি আমাকে মারতেন, যাতে আমি যিহোবার কথা ভুলে যাই আর আমাকে বলতেন, যদি আমি কথা বলতে বা হাঁটতে না পারি, তা হলে আমি মিটিংয়েও যেতে পারব না। কিন্তু তিনি আমাকে থামাতে পারেননি। মিটিংয়ে যাওয়া আমি কখনো বন্ধ করিনি।

 “আমার বাবা আমাকে তখন মারতেন, যখন আমার মা বাসায় থাকতেন না। আর তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়ে আমি যদি মাকে কিছু বলি, তা হলে তিনি মাকেও মারবেন। আমার শরীরে যে-আঘাতের দাগগুলো দেখা যেত, সেগুলো সম্বন্ধে তিনি অজুহাত দিয়ে বলতেন, মার্শাল আর্ট শেখাতে গিয়ে এমনটা হয়েছে, যেটা তিনি আমাকে জোর করে শেখাতে চেয়েছিলেন।

 “আমার সঙ্গে যা-কিছু ঘটছিল, তা আমি মাকে বলতে পারিনি কারণ আমি তখনও খুব ছোটো ছিলাম আর বাবাকে খুব ভয় পেতাম। তাই, আমি সব যিহোবাকে বলতাম। আমেরিকার মেরিল্যান্ডে আমাদের বাড়ির পিছনে বনের মধ্যে আমি সময় নিয়ে হাঁটতে যেতাম। সেখানে একটা সুন্দর ওক গাছ ছিল। আমি সেই গাছে উঠতাম আর বসার মতো একটা ডাল খুঁজে নিয়ে, সেটাতে বসে যিহোবার সঙ্গে কথা বলতাম। আমার কেমন লাগছে, তা আমি প্রার্থনায় যিহোবাকে বলতাম। আমি তাঁকে এও বলতাম যে, বড়ো হয়ে আমি তাঁর জন্য কী কী করব, যদি সেই পর্যন্ত বেঁচে থাকতে তিনি আমাকে সাহায্য করেন। তাঁর কাছে আমি এটাও বলতাম যে, নতুন জগতে আমি কী কী করব, আমার পরিবার কেমন হবে আর কোনো ভয় ও কষ্ট ছাড়া, শান্তিতে, আনন্দ নিয়ে আমি কেমন জীবন কাটাতে চাই।

 “আমার বাবা যখন লোভ দেখিয়ে বা মারধর করে আমাকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, সেই সময়গুলোতে আমি বুঝতে পারতাম যে, যিহোবা আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এবং শক্তি জোগাচ্ছেন। আসলে, যিহোবাই আমাকে সহ্য করতে এবং তার প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করেছিলেন।

 “১০ বছর বয়সে আমি বাপ্তিস্ম নেই আর এর দু-বছর পর আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। প্রথম প্রথম আমার বাবা এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারেন, তিনি আমার মুখে এত জোরে আঘাত করেন যে, আমার চোয়াল এর জায়গা থেকে সরে যায়।

 “কেউ কেউ আমাকে বলত যে, অগ্রগামী কাজ করার জন্য আমি এখনও খুব ছোটো। আর তারা এই বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করত যে, আমি আমার সিদ্ধান্তের গুরুত্ব বুঝতে পারছি না। তবে, আমি দেখেছিলাম, আমার এলাকার অল্পবয়সি অনেক যিহোবার সাক্ষি আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারা পার্টি করতে আর মজা করতে ব্যস্ত ছিল। ওদের দেখে মনে হত, ওরা সত্যিই খুব আনন্দে আছে। মাঝে মাঝে আমারও ওদের মতো করতে ইচ্ছা করত। আর আমি ভাবতাম, প্রচার কাজে এত সময় না দিয়ে আমার বয়সি ছেলে-মেয়েদের মতো একটু মজা করলে কী হয়। আর যখনই আমার মনে এই ধরনের চিন্তা আসত, আমি যিহোবার সঙ্গে কথা বলতাম।

 “আমার বয়স যখন ১৫-র কাছাকাছি, তখন একটা বড়ো মডেলিং এজেন্সি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমাকে ইতালির মিলান শহরে তাদের অফিসে কাজ করার জন্য একটা বড়ো অঙ্কের বেতনের কন্ট্র্যাক্ট অফার করে। অফারটা পেয়ে আমি ভাবি, মডেল হয়ে কাজ করলে কি দারুণ-ই না হবে! আমার ছবি ম্যাগাজিনে আসবে আর দামি দামি পোশাক পরে আমি ফ্যাশন শো-তে হাঁটব। তখনও পর্যন্ত তিন বছর হয়নি যে আমি অগ্রগামীর কাজ করছি। আমি চিন্তা করি, ‘এই চাকরিটা করলে আমি আমার খরচ মেটাতে পারব আর অগ্রগামীর কাজও চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’ যেহেতু আমার বাবাও আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাই আমি নিজেকে বোঝাই, এই টাকা দিয়ে আমি আমার মাকেও সাহায্য করতে পারব।

 “এই বিষয়ে আমি প্রার্থনা করি। আমি আমার মায়ের সঙ্গেও কথা বলি, যিনি অনেক বছর ধরে অগ্রগামীর কাজ করে চলছিলেন। এ ছাড়া, আমি একজন প্রেমময় প্রাচীন ভাইয়ের সঙ্গেও কথা বলি। আর সবসময়ের মতো আমি আমার সেই ওক গাছে উঠি আর সেখানে বসেও প্রার্থনা করি। সেই প্রাচীন ভাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে উপদেশক ৫:৪ পদ দেখান, যেখানে লেখা আছে, ‘ঈশ্বরের নিকটে মানত করিলে তাহা পরিশোধ করিও … যাহা মানত করিবে তাহা পরিশোধ করিও।’ আমি যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, আমি আমার পুরো হৃদয় দিয়ে তার সেবা করব। আর আমার মনে এই ভয় ছিল যে, আমি যদি এই চাকরিটা করি, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই, আমি সেই চাকরির অফারটা ফিরিয়ে দিই।

 “আমি বড়োও হয়েছি আর এখনও বেঁচে আছি আর আমার স্বামী জেসারের সঙ্গে সুখে শান্তিতে সংসার করছি। আমাদের নয় বছরের একটা ছেলেও রয়েছে, যার নাম কোনর। জেসার একজন প্রাচীন আর কোনর অবাপ্তাইজিত প্রকাশক। আমি ২৭ বছর ধরে অগ্রগামীর কাজ করে চলছি।

 “আমাদের বাড়ির পিছনে বনের মধ্যে থাকা সেই ওক গাছে বসে যিহোবার সঙ্গে লম্বা সময় ধরে কথা বলার কথা আমি প্রায়ই চিন্তা করি। সেইসময়ে আমি যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে বিনতি করেছিলাম আর তিনি চমৎকার উপায়ে আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। তিনি আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন আর নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমার পুরো জীবন ধরে আমি বার বার দেখেছি যে, যিহোবা কত প্রেমময় একজন বাবা। আমি খুবই খুশি যে, আমি পুরো হৃদয় দিয়ে তাঁকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর সেটা ছিল আমার জীবনে নেওয়া সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত।”