সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পুনরায় আস্থা গড়ে তোলা

পুনরায় আস্থা গড়ে তোলা

পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি

পুনরায় আস্থা গড়ে তোলা

স্টিভ *: “আমি কখনোই কল্পনা করতে পারিনি যে, জোডি ব্যভিচার করবে। আমি তার ওপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না যে, তাকে ক্ষমা করা আমার জন্য কতখানি কঠিন ছিল।”

জোডি: “স্টিভ কেন আমার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, সেটা আমি বুঝি। আমি যে-অনুতপ্ত, সেটা প্রমাণ করতে আমার অনেক বছর সময় লেগেছিল।”

ব্যভিচারের শিকার হয়েছেন এমন একজন ব্যক্তিকে বাইবেল এটা নির্ধারণ করার অধিকার দেয় যে, তিনি বিবাহবিচ্ছেদ করবেন কি করবেন না। * (মথি ১৯:৯) ওপরে উল্লেখিত স্টিভ, বিবাহবিচ্ছেদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি ও জোডি উভয়েই, তাদের বিয়েকে টিকিয়ে রাখার সংকল্প নিয়েছিলেন। কিন্তু, শীঘ্র তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এটার অর্থ শুধুমাত্র একসঙ্গে বাস করতে থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। কেন? কারণ তাদের মন্তব্যে আপনারা যেমন লক্ষ করেছেন, জোডির অবিশ্বস্ততা তাদের মধ্যে থাকা সমস্ত আস্থা ভেঙে দিয়েছিল। যেহেতু বৈবাহিক সুখের জন্য পারস্পরিক আস্থা অপরিহার্য, তাই তাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল।

ব্যভিচারের মতো এক গুরুতর সমস্যার পর, আপনি ও আপনার সাথি যদি আপনাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনারা এক কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হবেন। বিষয়টা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর, প্রথম কয়েক মাস হয়তো বিশেষভাবে কঠিন হতে পারে। কিন্তু আপনি সফল হতে পারেন! কীভাবে আপনি পুনরায় আস্থা গড়ে তুলতে পারেন? বাইবেলে পাওয়া প্রজ্ঞা সাহায্য করতে পারে। নীচের চারটে পরামর্শ বিবেচনা করুন।

১ পরস্পরের প্রতি সৎ হোন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা, যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া . . . সত্য আলাপ করিও।” (ইফিষীয় ৪:২৫) মিথ্যা, অর্ধসত্য আর এমনকী নীরব থাকা আস্থাকে নষ্ট করে দেয়। তাই, আপনাদের পরস্পরের প্রতি খোলাখুলিভাবে এবং সততার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।

প্রথম প্রথম, আপনি ও আপনার সাথি হয়তো এতটাই হতাশ হয়ে পড়েন যে, অবিশ্বস্ত হওয়ার বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাইবেন না। কিন্তু পরিশেষে, যা হয়েছে, তা নিয়ে আপনাকে অকপটে কথা বলতে হবে। আপনি হয়তো প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা না-ও করতে পারেন কিন্তু বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়া বিজ্ঞতার কাজ নয়। “প্রথমদিকে, আমি অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টা নিয়ে কথা বলা অত্যন্ত কঠিন ও অপ্রীতিকর বলে মনে করেছিলাম,” ওপরে উল্লেখিত জোডি বলেন। “এটার জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত হয়েছিলাম আর আমি এটাকে পুরোপুরিভাবে ভুলে যেতে চেয়েছিলাম।” কিন্তু, ভাববিনিময়ের এই অভাবের কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কেন? স্টিভ বলেন, “যেহেতু জোডি অবিশ্বস্ত হওয়ার বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চায়নি, তাই আমার সন্দেহ রয়েই গিয়েছিল।” আগের ঘটনা স্মরণ করে, জোডি স্বীকার করেন, “আমার স্বামীর সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা না করা ক্ষত সারানোর পথে বাধা হয়েছিল।”

নিঃসন্দেহে, বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধীয় যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা কষ্টদায়ক হবে। ডেবি, যার স্বামী পল তার সেক্রেটারির সঙ্গে ব্যভিচার করেছিলেন, তিনি বলেন: “আমার অনেক প্রশ্ন ছিল। কীভাবে? কেন? তারা কী নিয়ে কথা বলত? এই নিয়ে সবসময়ে চিন্তা করে আর একটার পর একটা সপ্তাহ কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমনকী আরও অনেক প্রশ্ন করে আমি আবেগগতভাবে ভেঙে পড়েছিলাম।” পল বলেন: “এটা ঠিক যে, কখনো কখনো ডেবি ও আমার মধ্যে তর্কবিতর্ক হতো। কিন্তু পরে সবসময়ই আমরা পরস্পরের কাছে ক্ষমা চাইতাম। সেই অকপট আলোচনা আমাদেরকে পরস্পরের আরও কাছে নিয়ে এসেছিল।”

কীভাবে আপনি এই ধরনের আলোচনাকে উত্তপ্ত হওয়া থেকে রোধ করতে পারেন? মনে রাখবেন যে, আপনার আসল উদ্দেশ্য, আপনার সাথিকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং দুঃখজনক ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করা এবং আপনার বিয়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করা। উদাহরণস্বরূপ, চাল সুয়ের অবিশ্বস্ততার ফলে, তিনি এবং তার স্ত্রী মি ইয়াং, তাদের সম্পর্ককে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। চাল সু বলেন, ‘আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমি আমার ব্যক্তিগত কাজকর্ম নিয়ে খুব বেশি ব্যস্ত থাকতাম। এ ছাড়া, অন্যদেরকে খুশি করা ও তাদের প্রত্যাশাগুলোকে মেটানোর জন্যও আমি অতিরিক্ত চিন্তা করতাম। আমি তাদের প্রতিই আমার বেশির ভাগ সময় ও মনোযোগ দিতাম। এর ফলে, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে খুব সামান্য সময় কাটাতাম।’ এই অন্তর্দৃষ্টি চাল সু ও মি ইয়াং দুজনকেই এমন পরিবর্তনগুলো করতে সমর্থ করেছিল, যা পরে তাদের বিয়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছিল।

এটা করে দেখুন: আপনি যদি অবিশ্বস্ত সাথি হয়ে থাকেন, তাহলে অজুহাত দেখানো অথবা আপনার সাথিকে দোষ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার কাজের এবং আপনি যে-আঘাত দিয়েছেন, সেটার দায় স্বীকার করুন। আপনাকে যদি আঘাত করা হয়ে থাকে, তাহলে আপনার সাথির সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলবেন না অথবা তার প্রতি খারাপ ভাষা ব্যবহার করবেন না। এই ধরনের কথাবার্তা এড়িয়ে চলার দ্বারা, আপনি আপনার সাথিকে আপনার সঙ্গে সবসময় খোলাখুলিভাবে কথা বলতে উৎসাহিত করবেন।—ইফিষীয় ৪:৩২.

২ একটা দল হিসেবে কাজ করুন। বাইবেল বলে, “এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল।” কেন? “কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়। কারণ তাহারা পড়িলে এক জন আপন সঙ্গীকে উঠাইতে পারে; কিন্তু ধিক্‌ তাহাকে, যে একাকী, কেননা সে পড়িলে তাহাকে তুলিতে পারে, এমন দোসর কেহই নাই।” (উপদেশক ৪:৯, ১০) আপনি যখন পুনরায় আস্থা গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, তখন এই নীতিটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।

আপনারা যদি একসঙ্গে কাজ করেন, তাহলে আপনারা আপনাদের সম্পর্কে পুনরায় সফলভাবে আস্থা গড়ে তুলতে পারেন। কিন্তু, বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য আপনাদের দুজনকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আপনি যদি একা একাই মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি হয়তো নিজের জন্য আরও বেশি সমস্যা নিয়ে আসতে পারেন। আপনাদের পরস্পরকে সঙ্গী হিসেবে দেখতে হবে।

স্টিভ এবং জোডি এটাই মনে করেছিল। জোডি বলেন, ‘এর জন্য সময় লেগেছিল। কিন্তু এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য স্টিভ ও আমি একসঙ্গে একটা দল হিসেবে কাজ করেছিলাম। তাকে আবারও আর কখনো এই ধরনের যন্ত্রণা না দেওয়ার জন্য আমি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। আর যদিও স্টিভ কষ্ট পাচ্ছিল, কিন্তু সে আমাদের বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিল। প্রতিটা দিন, আমি তাকে তার প্রতি আমার আনুগত্যের বিষয়ে আশ্বস্ত করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজতাম আর সে ক্রমাগত আমার প্রতি তার ভালোবাসা দেখাত। এইজন্য, আমি তার কাছে সবসময়ই কৃতজ্ঞ থাকব।’

এটা করে দেখুন: আপনার বিবাহে পুনরায় আস্থা গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে একটা দল হিসেবে কাজ করার সংকল্প নিন।

৩ পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন। ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তাঁর শ্রোতাদেরকে সাবধান করার পর, যিশু এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও।” (মথি ৫:২৭-২৯) আপনি যদি অবিশ্বস্ত সাথি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কি এমন কাজ অথবা মনোভাবের বিষয়ে চিন্তা করতে পারেন, যেটাকে আপনার বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য উপড়িয়ে দূরে ফেলে দেওয়া উচিত?

স্পষ্টতই, আপনাকে ব্যভিচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করতে হবে। * (হিতোপদেশ ৬:৩২; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) পল, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি তার কাজের সময় ও তার সেলফোনের নম্বর পরিবর্তন করেছিলেন, যাতে তিনি অন্য স্ত্রীলোকটির সঙ্গে আর যোগাযোগ না রাখেন। কিন্তু, পুরোপুরিভাবে যোগাযোগ ছিন্ন করার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। পল তার স্ত্রীর আস্থা পুনরায় গড়ে তোলার জন্য এতটাই সংকল্পবদ্ধ ছিলেন যে, তিনি তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি তার সেলফোন ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং শুধুমাত্র তার স্ত্রীর ফোন ব্যবহার করছিলেন। এই অসুবিধা ভোগ করার ফলে কি কোনো উপকার লাভ করা গিয়েছিল? তার স্ত্রী ডেবি বলেন: “ছয় বছর হয়ে গিয়েছে আর এখনও আমি মাঝে মাঝে এই ভেবে উদ্‌বিগ্ন হই যে, সেই স্ত্রীলোকটি হয়তো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এখন আমার এই আস্থা রয়েছে যে, পল প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করবে না।”

আপনিই যদি দোষ করে থাকেন, তাহলে আপনাকে হয়তো আপনার ব্যক্তিত্বেও পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার আচরণ হয়তো প্রেমের ভান করার মতো হতে পারে অথবা আপনার হয়তো অন্য লোকেদের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে ‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎত্যাগ করুন।’ পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন যা আপনার ওপর আপনার সাথির আস্থাকে দৃঢ় করবে। (কলসীয় ৩:৯, ১০) আপনি যেভাবে বড়ো হয়েছেন, সেটা কি আপনার জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করাকে কঠিন করে তুলেছে? এমনকী আপনি যদি প্রথমে অস্বস্তি বোধও করেন, তারপরও আপনার সাথির প্রতি ক্রমাগত প্রেম এবং আশ্বাস প্রকাশ করুন। স্টিভ স্মরণ করে বলেন: “জোডি প্রায়ই আমাকে স্পর্শ করে আমার প্রতি তার ভালোবাসা দেখাত আর সে সবসময়েই বলত ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’”

কিছু সময় ধরে, আপনার রোজকার কাজকর্ম সম্বন্ধে আপনার সাথিকে সমস্তকিছু বলা উচিত। মি ইয়াং, যার সম্বন্ধে আগে বলা হয়েছে, তিনি বলেন: “চাল সু তার সারাদিনে যা ঘটত, সেই সমস্তকিছুই, এমনকী খুব ছোটোখাটো বিষয়ও আমাকে বলার একটা লক্ষ্য রেখেছিল আর এর মাধ্যমে সে আমাকে এটা দেখানোর চেষ্টা করেছিল যে, আমার কাছে সে কোনোকিছুই লুকাচ্ছে না।”

এটা করে দেখুন: পরস্পরকে জিজ্ঞেস করুন যে, সম্ভবত কোন কাজগুলো পুনরায় আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। সেগুলোর একটা তালিকা বানান আর তারপর সেগুলো করুন। এ ছাড়া, আপনার রুটিনে এমন কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করুন, যেগুলো আপনারা একসঙ্গে উপভোগ করতে পারেন।

৪ কখন এগিয়ে যেতে হবে, তা বোঝার চেষ্টা করুন। সঙ্গেসঙ্গে এই উপসংহারে আসবেন না যে, এখনই ঠিক আগের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করার সময়। হিতোপদেশ ২১:৫ পদ সাবধান করে: “যে কেহ হঠকারী, তাহার কেবল অভাব ঘটে।” পুনরায় আস্থা গড়ে তোলার জন্য সময়—হয়তো অনেক বছর—লাগবে।

আপনার সঙ্গে যদি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়ে থাকে, তাহলে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য সময় নিন। মি ইয়াং স্মরণ করে বলেন: “আমি মনে করতাম যে, একজন স্ত্রীর তার অবিশ্বস্ত স্বামীকে ক্ষমা করতে না পারা ছিল এক অদ্ভুত বিষয়। আমি বুঝতে পারতাম না যে, এত দীর্ঘ সময় ধরে সেই স্ত্রীর এত রেগে থাকার কী কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, যখন আমার স্বামী আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছিল, তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ক্ষমা করা কেন কঠিন।” ক্ষমা করা—এবং আস্থা গড়ে তোলা—সাধারণত ধীরে ধীরে হয়।

কিন্তু, উপদেশক ৩:১-৩ পদ বলে যে, “সুস্থ করিবার কাল” রয়েছে। প্রথম প্রথম, আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, নিজেকে আপনার সাথির কাছ থেকে আবেগগতভাবে আলাদা করে রাখা হল সবচেয়ে নিরাপদ। তবে, অনির্দিষ্ট কাল ধরে তা করা আপনাকে আপনার সাথির প্রতি পুনরায় আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে না। ভেঙে যাওয়া সম্পর্ককে জোড়া লাগানোর জন্য আপনার সাথিকে ক্ষমা করুন আর আপনি যে ক্ষমা করেছেন, সেটা আপনার একান্ত চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো আপনার সাথিকে বলার দ্বারা প্রকাশ করুন। এ ছাড়া, আপনার সাথিকেও তার আনন্দ এবং চিন্তার বিষয়গুলো বলার জন্য উৎসাহিত করুন।

এমন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করবেন না, যেগুলো আপনাকে আরও তিক্ত করে তুলবে। এই তিক্ততাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। (ইফিষীয় ৪:৩২) আপনি হয়তো ঈশ্বরের নিজের উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করা সাহায্যকারী বলে মনে করতে পারেন। প্রাচীন ইস্রায়েলে তাঁর উপাসকরা যখন তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখন তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এমনকী যিহোবা ঈশ্বর নিজেকে, বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন এমন একজন বিবাহ সাথির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (যিরমিয় ৩:৮, ৯; ৯:২) কিন্তু তিনি ‘চিরকাল ক্রোধ রাখেননি।’ (যিরমিয় ৩:১২) তাঁর লোকেরা যখন আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তাঁর কাছে ফিরে এসেছিল, তখন তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন।

পরিশেষে, আপনারা উভয়েই যখন এই বিষয়ে সন্তুষ্ট হবেন যে, আপনাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে, তখন আপনারা নিরাপত্তার এক অনুভূতি লাভ করবেন। এরপর, শুধুমাত্র আপনাদের বিয়েকে টিকিয়ে রাখার প্রতি ক্রমাগত মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, আপনারা একসঙ্গে অন্যান্য লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারেন। এরপরও, আপনাদের উন্নতি বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য নিয়মিতভাবে সময় করে নিন। আত্মতুষ্ট হবেন না। ছোটোখাটো বাধাবিপত্তিকে কাটিয়ে উঠুন এবং আপনাদের পরস্পরের প্রতি করা প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করুন।—গালাতীয় ৬:৯.

এটা করে দেখুন: আপনাদের বিয়ে আগে যেমন ছিল, ঠিক সেইরকম অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার পরিবর্তে, আপনারা এক নতুন ও দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে চিন্তা করুন।

আপনি সফল হতে পারেন

কখনো কখনো, আপনি যদি সফল হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চিত বোধ করেন, তাহলে এই কথাটা মনে রাখুন: ঈশ্বর হলেন বিবাহ ব্যবস্থার উদ্যোক্তা। (মথি ১৯:৪-৬) তাই, তাঁর সাহায্যে আপনি আপনার বৈবাহিক জীবনে সফল হতে পারেন। ওপরে উল্লেখিত সকল দম্পতিই বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিল এবং তাদের বিয়েকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল।

স্টিভ ও জোডির সম্পর্কে চিড় ধরার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। স্টিভ তার বিয়ে জোড়া লাগানোর বিষয়টাকে এইভাবে বর্ণনা করেন: “যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার পরই, আমরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছিলাম। আমরা যে-সাহায্য লাভ করেছিলাম, তা ছিল অমূল্য। এর ফলে, আমরা সেই কঠিন সময়গুলোকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম।” জোডি বলেন: “আমরা সেই কঠিন সময়কে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি বলে আমি মনে করি যে, আমরা প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছি। একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার ও সেইসঙ্গে কঠোর প্রচেষ্টা করার ফলে এখন আমাদের এক চমৎকার বৈবাহিক জীবন রয়েছে।” (w১২-E ০৫/০১)

[পাদটীকাগুলো]

^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ এই ধরনের এক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্যের জন্য ১৯৯৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন সচেতন থাক! পত্রিকার ২৫ পৃষ্ঠা এবং ১৯৯৫ সালের আগস্ট ৮, সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১০ ও ১১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ যদি কিছু সময়ের জন্য কোনো ধরনের যোগাযোগ এড়ানো না যায় (যেমন, কর্মস্থলে), তাহলে সেটা একমাত্র প্রয়োজনের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত। অন্যদের উপস্থিতিতে এবং সাথির পূর্ণ অবগতিতে অন্য ব্যক্তিটির সঙ্গে আপনার যোগাযোগ করা উচিত।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন . . .

▪ অতীতের অবিশ্বস্ততা সত্ত্বেও, কোন কারণগুলোর জন্য আমি আমার বিয়েকে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম?

▪ আমার সাথির মধ্যে এখন আমি কোন ইতিবাচক গুণগুলো দেখতে পাই?

▪ আমার সাথি ও আমি যখন বিবাহপূর্ব মেলামেশা করছিলাম, তখন কীভাবে আমি ছোটোখোটো উপায়ে ভালোবাসা দেখিয়েছিলাম আর কীভাবে আমি আবারও তা দেখাতে পারি?