সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“কিংজ্‌লি যদি পারেন, তাহলে আমিও পারব!”

“কিংজ্‌লি যদি পারেন, তাহলে আমিও পারব!”

কিংজ্‌লির কাঁধে মৃদু চাপ দেওয়ার পর পরই, তিনি বাইবেল পড়তে শুরু করেন। মণ্ডলীর ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ এটা তার প্রথম বক্তৃতা। তিনি সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটা শব্দ ভেঙে ভেঙে উচ্চারণ করেন। কিন্তু, একী! তিনি বাইবেলের দিকে তাকাচ্ছেন না কেন?

কিংজ্‌লি শ্রীলঙ্কায় বাস করেন আর তিনি চোখে দেখতে পান না। এ ছাড়া, তিনি কানে কম শোনেন এবং বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য তার হুইল চেয়ারের প্রয়োজন হয়। কীভাবে এই ব্যক্তি যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে পেরেছেন এবং ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছেন? আমি তা বলছি।

আমি যখন প্রথম কিংজ্‌লির সঙ্গে দেখা করি, তখন বাইবেলের সত্য জানার জন্য তার তৃষ্ণা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন সাক্ষির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন। তার কাছে ব্রেইল অক্ষরে তৈরি জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের একটা কপি ছিল আর সেটা ব্যবহার করতে করতে প্রায় ছিঁড়ে গিয়েছিল। * আমি তাকে আবারও অধ্যয়ন শুরু করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম আর তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। তবে আমাদের দুটো প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছিল।

প্রথমত, কিংজ্‌লি একটা আশ্রমে থাকতেন, যেখানে বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাখা হতো। যেহেতু আশেপাশে অনেক আওয়াজ হতো আর কিংজ্‌লি কানে কম শুনতেন, তাই আমাকে জোরে জোরে কথা বলতে হতো। আসলে, সেই আশ্রমের সবাই আমাদের সাপ্তাহিক অধ্যয়নের বিষয়বস্তু শুনতে পেতেন!

দ্বিতীয়ত, কিংজ্‌লি প্রত্যেক বার অধ্যয়নের সময় বেশি নতুন তথ্য পড়তে এবং বুঝতে পারতেন না। আমাদের অধ্যয়ন যেন ফলপ্রসূ হয়, সেইজন্য কিংজ্‌লি খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতেন। আগে থেকেই তিনি অধ্যয়নের বিষয়বস্তু বার বার পড়তেন, তার ব্রেইল বাইবেল থেকে শাস্ত্রপদগুলো মিলিয়ে নিতেন আর এরপর মনে মনে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে ফেলতেন। এই পদ্ধতি অনেক কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছিল। অধ্যয়নের সময় তিনি মাদুর পেতে দু-পা আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে বসতেন আর অনেক উদ্যমের সঙ্গে মেঝেতে হাত দিয়ে শব্দ করতে করতে তার শেখা বিষয়গুলো জোরে জোরে বলতেন। খুব শীঘ্রই আমরা সপ্তাহে দু-দিন দু-ঘন্টা করে অধ্যয়ন করতে শুরু করি!

সভাতে যোগদান ও অংশগ্রহণ

কিংজ্‌লি ও পল

কিংজ্‌লি কিংডম হলের সভাগুলোতে যোগ দিতে চাইতেন কিন্তু তা করা খুব সহজ ছিল না। হুইল চেয়ার এবং গাড়িতে ওঠা-নামার জন্য ও সেইসঙ্গে কিংডম হলে যাওয়ার জন্য তার সাহায্যের প্রয়োজন হতো। কিন্তু মণ্ডলীর অনেকেই পালা করে তাকে সাহায্য করত আর এই কাজকে এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখত। সভার সময় কিংজ্‌লি একটা স্পিকারের অনেক কাছে বসতেন, মনোযোগ দিয়ে সভার বিষয়বস্তু শুনতেন আর এমনকী মন্তব্যও করতেন!

আরও কিছুদিন অধ্যয়ন করার পর কিংজ্‌লি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রথম বক্তৃতার দু-সপ্তাহ আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি প্র্যাকটিস করছেন কি না। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, “হ্যাঁ ভাই, আমি ৩০ বার প্র্যাকটিস করেছি।” আমি তার প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করেছিলাম এবং তার পাঠ শুনতে চেয়েছিলাম। তিনি তখন তার বাইবেল খোলেন, ব্রেইল অক্ষরের উপর আঙুল রেখে পড়তে শুরু করেন। কিন্তু আমি লক্ষ করি, তিনি সাধারণত পৃষ্ঠার উপর যে-গতিতে আঙুল নাড়ান, সেভাবে নাড়াচ্ছেন না। আসলে তিনি বাইবেল পাঠের পুরো বিষয়বস্তু মুখস্থ করে ফেলেছিলেন!

আমি অবাক হয়ে তার দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম আর আমার গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমি কিংজ্‌লিকে জিজ্ঞেস করি, মাত্র ৩০ বার প্র্যাকটিস করে কীভাবে তিনি এত ভালোভাবে মনে রাখতে পেরেছেন। তিনি উত্তর দেন: “আসলে আমি প্রতিদিন ৩০ বার করে প্র্যাকটিস করেছি।” এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কিংজ্‌লি মাদুর পেতে বসে সেই পাঠের বিষয়বস্তু বার বার পড়েছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার সেটা মুখস্থ হয়।

তারপর কিংডম হলে তার বক্তৃতার দিন উপস্থিত হয়। কিংজ্‌লি যখন তার বক্তৃতা শেষ করেন, তখন পুরো মণ্ডলী হাততালিতে ফেটে পড়ে এবং অনেকে এই নতুন ছাত্রের দৃঢ়সংকল্প দেখে কেঁদে ফেলে। একজন প্রকাশক, যিনি ঘাবড়ে যেতেন বলে ঐশিক বিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তিনি আবারও নাম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কেন? সেই প্রকাশক বোন বলেছিলেন, “কিংজ্‌লি যদি পারেন, তাহলে আমিও পারব!”

তিন বছর ধরে বাইবেল অধ্যয়ন করার পর ২০০৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কিংজ্‌লি যিহোবার প্রতি তার উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নেন। কিংজ্‌লি ২০১৪ সালের মে মাসের ১৩ তারিখে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একজন অনুগত সাক্ষি ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, পরমদেশ পৃথিবীতে পূর্ণশক্তি এবং সিদ্ধ দেহ নিয়ে তিনি বিশ্বস্তভাবে সেবা করে যাবেন। (যিশা. ৩৫:৫, ৬)—বলেছেন, পল ম্যাকম্যানাস।

^ অনু. 4 ব্রেইল হচ্ছে এমন একটা পদ্ধতি, যেটার মাধ্যমে অন্ধ ব্যক্তিরা অক্ষরের উপর আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে লেখা বুঝতে পারেন। আর উল্লেখিত বইটা ১৯৯৫ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল। এখন আর ছাপানো হয় না।