সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সাক্ষাৎকার | ফং ইয়

একজন সফ্টওয়্যার ডিজাইনার তার বিশ্বাস সম্বন্ধে বলেন

একজন সফ্টওয়্যার ডিজাইনার তার বিশ্বাস সম্বন্ধে বলেন

ড. ফং ইয় বেজিংয়ের কাছে অবস্থিত চায়না ইনস্টিটিউট অভ্‌ আ্যটোমিক এনার্জি-তে গণিতের গবেষক হিসেবে তার কেরিয়ার শুরু করেন। সেই সময় তিনি নাস্তিক ছিলেন এবং বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এখন ড. ইয় বিশ্বাস করেন, জীবন ঈশ্বরের দ্বারা পরিকল্পিত ও সৃষ্ট হয়েছে। সজাগ হোন! পত্রিকা তাকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল।

আপনার ছোটোবেলা সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলুন।

১৯৫৯ সালে জিয়ানসি প্রদেশের ফজো শহরে আমার জন্ম হয়। আমার বয়স যখন আট বছর, তখন আমাদের দেশ এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, যেটাকে আজ সাংস্কৃতিক বিপ্লব বলে আখ্যা দেওয়া হয়। আমার বাবা ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আর তাকে বাড়ি থেকে বহু দূরে জনবসতিহীন এক জায়গায় রেলপথ বানানোর জন্য যেতে বলা হয়। অনেক বছর ধরে, তিনি বছরে মাত্র এক বারই বাড়িতে আসার সুযোগ পেতেন। তখন আমি আমার মায়ের সঙ্গে থাকতাম। আমার মা একটা প্রাথমিক স্কুলে পড়াতেন আর আমরা আসলে সেখানেই থাকতাম। ১৯৭০ সালে আমাদের লিনচুয়াং জেলার ইয়োফং-এ চলে যেতে হয়, যেটা সেই সময় একটা অনুন্নত গ্রাম ছিল আর সেখানে খাবার জিনিসের অভাব ছিল।

আপনার পরিবারের লোকেরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করতেন?

ধর্ম কিংবা রাজনীতি, কোনোটাতেই আমার বাবার আগ্রহ ছিল না। আমার মা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। স্কুলে আমাকে শেখানো হয়েছিল, জীবন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে আর শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি যা শিখেছিলাম, আমি সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম।

কেন আপনি গণিতের বিষয়ে আগ্রহী হয়েছিলেন?

আমি গণিত শিখতে শুরু করি কারণ এতে যুক্তিসংগত সূত্রের মাধ্যমে সত্য বিষয় খোঁজা যায়। ১৯৭৬ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতা মাও সে-তুং মারা যাওয়ার কিছু দিন পরেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হই। প্রধান বিষয় হিসেবে আমি গণিত বেছে নিই। মাস্টারস ডিগ্রি পাওয়ার পর আমার প্রথম কাজ ছিল, নিউক্লিয়ার রিয়েকটারের নকশা তৈরির জন্য গাণিতিক গবেষণা করা।

বাইবেল সম্বন্ধে প্রথমে আপনার কেমন ধারণা ছিল?

১৯৮৭ সালে টেক্সাসে এ আ্যন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করার জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসি। আমি জানতাম, আমেরিকার বেশিরভাগ লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং বাইবেল পড়ে। আমি এও শুনেছিলাম, বাইবেলে অনেক ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা রয়েছে আর তাই আমি চিন্তা করি, আমার বাইবেল পড়া উচিত।

বাইবেলের বিভিন্ন শিক্ষা আমার বেশ ব্যাবহারিক বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, কিছু কিছু অংশ আমার পক্ষে বোঝা কঠিন ছিল আর তাই আমি বাইবেল পড়া বন্ধ করে দিই।

কীভাবে আপনি পুনরায় বাইবেলের প্রতি আগ্রহী হলেন?

সৃষ্টিকর্তা বলে যে কেউ আছেন, এই ধারণা আমার কাছে নতুন ছিল আর তাই আমি এই বিষয় নিয়ে নিজের মতো করে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিই

১৯৯০ সালে একজন যিহোবার সাক্ষি আমার বাড়িতে আসেন এবং আমাকে বাইবেল থেকে দেখান, ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য এক ভালো সময় আসতে চলেছে। সেই সাক্ষি ব্যবস্থা করেন, যেন এক দম্পতি এসে আমাকে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করেন। পরে, আমার স্ত্রী লিপিং আমার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়নে যোগ দেয়। আমার স্ত্রী চিনের হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যা পড়াত আর সেও একজন নাস্তিক ছিল। আমরা জানতে পারি, জীবনের উৎপত্তি সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে। সৃষ্টিকর্তা বলে যে কেউ আছেন, এই ধারণা আমার কাছে নতুন ছিল আর তাই আমি এই বিষয় নিয়ে নিজের মতো করে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিই।

কীভাবে আপনি তা করেছিলেন?

একজন গণিতবিদ হিসেবে আমি কোনো কিছুর পিছনে থাকা সম্ভাব্য কারণগুলো গণনা করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম। এ ছাড়া আমি শিখেছিলাম, জীবন যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে থাকে, তা হলে প্রোটিন অণুগুলো নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে অস্তিত্বে ছিল। আর তাই আমি গণনা করার চেষ্টা করি, এলোমেলো পদ্ধতিতে প্রোটিন অণু উৎপন্ন হওয়া সম্ভব কি না। আমাদের জানা অণুগুলোর মধ্যে প্রোটিন অণু হল সবচেয়ে জটিল আর জীবিত কোষের মধ্যে হাজার হাজার বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন অণু রয়েছে, যেগুলো একে অন্যের সঙ্গে একেবারে সঠিকভাবে যুক্ত। অন্যদের মতো আমিও বুঝতে পেরেছিলাম, স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটা প্রোটিন অণু গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা এতটাই কম যে, সেটা কার্যত অসম্ভব! আমি বিবর্তনবাদের থিওরিতে এমন কিছু পড়িনি, যেটা সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে, কীভাবে এই অতীব জটিল অণুগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্ট হতে পারে আর সেইসমস্ত জীবিত প্রাণীর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, যেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রোটিন। আমার কাছে এই তথ্যগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন।

কীভাবে আপনি দৃঢ়নিশ্চিত হয়েছিলেন, বাইবেল ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে?

যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে চলার সময় আমি জানতে পারি যে, বাইবেলে এমন বহু বিস্তারিত ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে, যেগুলো ইতিমধ্যে পরিপূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়া, নিজের জীবনে বাইবেলের নীতি প্রয়োগ করা যে কতটা উপকারজনক, তা আমি উপলব্ধি করতে শুরু করি। আমি অবাক হয়ে ভাবি, ‘কীভাবে হাজার হাজার বছর আগে বাইবেল লেখকরা এমন প্রজ্ঞার কথা লিখতে পেরেছিলেন, যেগুলো বর্তমানে খুবই ব্যাবহারিক?’ ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারি, বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য।

কীভাবে আপনি ক্রমাগত দৃঢ়নিশ্চিত হয়েছেন যে, একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন?

আমি যখন প্রকৃতিতে বিদ্যমান বিভিন্ন মৌলিক পদার্থ নিয়ে চিন্তা করি, তখন এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না যে, একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। বর্তমানে আমি কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার ডিজাইন করি আর প্রায়ই এই বিষয়টা ভেবে অবাক হয়ে যাই, কীভাবে আমাদের মস্তিষ্ক কম্পিউটার প্রোগ্রামের চেয়েও হাজার গুণ দক্ষ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের মস্তিষ্কের কথা বুঝতে পারার ক্ষমতা বোধের অগম্য। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক সহজেই কথা বুঝতে পারি, এমনকী অসম্পূর্ণ বাক্য, হাসি, কাশি, তোতলানো, উচ্চারণের ভঙ্গি, প্রতিধ্বনি, আশেপাশের আওয়াজ কিংবা টেলিফোনে শোনা অস্পষ্ট কথা। আপনারা হয়তো বলবেন, এটা তো খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু, একজন সফ্টওয়্যার ডিজাইনারের কাছে বিষয়টা একেবারে আলাদা। এমনকী সবচেয়ে উন্নত স্পিচ রেকগনিশন সফ্টওয়্যারও মানুষের মস্তিষ্কের ধারে-কাছে আসে না।

সবচেয়ে জটিল কম্পিউটারের বিপরীতে আমাদের মস্তিষ্ক অনুভূতি আর সেইসঙ্গে উচ্চারণ ভঙ্গি বুঝতে পারে এবং গলার স্বর শুনে একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারে। সফ্টওয়্যার ডিজাইনাররা এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন, কীভাবে কম্পিউটার মানুষের মস্তিষ্কের কথা শনাক্ত করার ক্ষমতাকে নকল করতে পারে। আমি এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চিত, তা করার মাধ্যমে আসলে তারা ঈশ্বরের সৃষ্টি নিয়েই পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন। ▪