সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারে সুখ পাওয়ার জন্য পরামর্শ

পরিবারে সুখ পাওয়ার জন্য পরামর্শ

ঈশ্বর বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং সন্তানরা তারই দেওয়া উপহার। তাই, তিনি চান যেন পরিবারের সবাই সুখে শান্তিতে থাকে। তিনি তাঁর শাস্ত্রে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ভালো ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা যদি তাঁর এই পরামর্শগুলো মেনে চলি, তা হলে পরিবারে সবার মাঝে সুখ শান্তি থাকবে। আসুন দেখি, তিনি কী পরামর্শ দিয়েছেন।

স্বামীরা, আপনাদের স্ত্রীকে ভালোবাসুন

“একইভাবে, স্বামীদেরও তাদের স্ত্রীদের নিজেদের দেহের মতো ভালোবাসা উচিত। যে নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসে, সে নিজেকেই ভালোবাসে। কেউ তো কখনো নিজের দেহকে ঘৃণা করে না, বরং সে নিজের দেহের জন্য পুষ্টি জোগায় এবং দেহকে মূল্যবান বলে গণ্য করে, ঠিক যেমন খ্রিস্টও মণ্ডলীর প্রতি করে থাকেন।”—ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯.

স্বামী হলেন পরিবারের মস্তক। (ইফিষীয় ৫:২৩) কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন কিংবা তার উপর হুকুম চালাবেন। একজন ভালো স্বামী তার স্ত্রীকে গুরুত্ব দেন, তার যত্ন নেন এবং তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। তিনি তার স্ত্রীর প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান। তিনি তার স্ত্রীকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন আর সবসময় নিজের ইচ্ছামতো করার জন্য জোরাজুরি করেন না। (ফিলিপীয় ২:৪) তিনি তার স্ত্রীর কাছে কোনো কিছু না লুকিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন আর তার কথাও মন দিয়ে শোনেন। তিনি কখনো তার স্ত্রীর উপর প্রচণ্ড “রাগ” করেন না, তাকে মারধর করেন না কিংবা গালিগালাজও করেন না।—কলসীয় ৩:১৯.

স্ত্রীরা, আপনাদের স্বামীকে সম্মান করুন

“স্ত্রীর উচিত, যেন সে তার স্বামীকে গভীর সম্মান করে।”—ইফিষীয় ৫:৩৩.

একজন ভালো স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান করেন আর স্বামী যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে সমর্থন করেন। তা করলে সংসারে শান্তি বজায় থাকবে। একজন ভালো স্ত্রী তার স্বামীর করা ভুলগুলো নিয়ে তাকে বার বার খোঁটা দেন না, বরং তিনি শান্ত থাকেন এবং সবসময়ই মর্যাদা দিয়ে কথা বলেন। (১ পিতর ৩:৪) তিনি যদি কোনো সমস্যা নিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চান, তা হলে তিনি উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন এবং ভালোভাবে ও সম্মান দেখিয়ে কথা বলেন। —উপদেশক ৩:৭.

আপনাদের বিবাহসাথির প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন

“মনুষ্য . . . আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।”—আদিপুস্তক ২:২৪.

একজন পুরুষ ও নারী যখন বিয়ে করেন, তখন তারা এক ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে, যখন তারা একে অন্যের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে এবং ছোটো ছোটো কাজ করে একে অন্যকে খুশি করার চেষ্টা করে। তারা নিজের বিবাহসাথি ছাড়া অন্য কারো প্রতি রোমান্টিক আগ্রহ দেখায় না বা অন্যের সঙ্গে যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হয় না। যদি কেউ এমন করে, তা হলে সে তার নির্দোষ সাথিকে খুবই কষ্ট দেবে। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে একে অন্যের প্রতি তাদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় আর এমনকী পুরো পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে।—ইব্রীয় ১৩:৪.

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিন

“বালককে [“সন্তানকে,” NW] তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।”—হিতোপদেশ ২২:৬.

সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব ঈশ্বর বাবা-মাকে দিয়েছেন। সন্তানদের শুধু এতটুকু বলা যথেষ্ট নয় যে, এটা করো অথবা এটা কোরো না। এর পাশাপাশি, বাবা-মায়ের নিজেদের উদাহরণের মাধ্যমেও তাদের শেখানো উচিত। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) সন্তানেরা যখন কোনো ভুল করে ফেলে, তখন বাবা-মায়ের ‘দ্রুত রেগে যাওয়া’ উচিত নয়। বরং তাদের “শোনার ব্যাপারে ইচ্ছুক এবং কথা বলার ব্যাপারে ধীর” হওয়া উচিত। (যাকোব ১:১৯) বুদ্ধিমান বাবা-মায়েরা প্রথমে সন্তানের পুরো কথা ঠাণ্ডা মাথায় মন দিয়ে শোনেন। তারপর, তাদের যদি মনে হয় যে, সন্তানকে সংশোধন করার প্রয়োজন রয়েছে, তা হলে তারা তা প্রেমের সঙ্গে করেন।

সন্তানেরা, তোমাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হও

“সন্তানেরা, তোমরা . . . নিজ নিজ বাবা-মায়ের বাধ্য হও, . . . ‘তোমার বাবা এবং তোমার মাকে সমাদর কোরো।’”—ইফিষীয় ৬:১, ২.

সন্তানদের তাদের বাবা-মায়ের কথা শোনা উচিত এবং তাদের সম্মান করা উচিত। এমনটা করলে সংসারে শান্তি বজায় থাকবে আর সবার মনও ভালো থাকবে। সন্তানেরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পরও তাদের বাবা-মাকে সম্মান করা উচিত এবং তাদের যত্ন নেওয়া উচিত। তারা যদি বাবা-মায়ের সঙ্গে না-ও থাকে, তা হলেও তাদের বাবা-মায়ের ঘরের বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে আর্থিক সমর্থন জুগিয়ে কিংবা যেকোনো প্রয়োজনের সময় তাদের পাশে থেকে সাহায্য করা উচিত।—১ তীমথিয় ৫:৩, ৪.